সরেজমিন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহরের উপকণ্ঠে নয়াগোলা বলুনপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায় মাছ চাষের অত্যাধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন ‘আইপিআরএস’ প্রযুক্তি। ব্যক্তি উদ্যোগে ৬০ বিঘা আয়তনের জলাশয়ে এই প্রকল্প চালু করেছেন ‘নবাব মৎস্য খামার প্রকল্প’-এর মালিক আকবর হোসেন।
এই পদ্ধতিতে স্থাপিত ১৩টি চ্যানেলের প্রতিটিতে ১২ হাজার থেকে ২০ হাজার পিস রুই, কাতলা, গ্রাসকার্প, মৃগেল, মনোসেক্স তেলাপিয়া ও পাঙ্গাশ মাছ চাষ করা হচ্ছে। আর দেশের কৃষি জমি রক্ষায় এবং আমিষের চাহিদা পূরণে অল্প জায়গায় বেশি মাছ চাষ এবং নদীর মতো স্বাদ পেতে এই প্রকল্প গড়ে তোলেন মৎস্য চাষে জাতীয় পুরস্কারে ভূষিত সফল মাছ চাষি আকবর হোসেন।
তিনি বলেন, যেখানে এক বিঘা আয়তনের একটি পুকুরে ৩০০-৪০০ মাছ উৎপাদন করা সম্ভব, সেখানে এক বিঘায় এই পদ্ধতিতে ১০ হাজার মাছ চাষ করা সম্ভব। অল্প জায়গায় এত বেশি স্বাস্থ্যসম্মত ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করা যায় দেখে আমি আগ্রহ প্রকাশ করি। চায়নার চেয়ে আমাদের দেশের মাটি, আবহাওয়া ও সানলাইট ভালো হওয়ায় তাদের চেয়ে আমরা এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে অনেক ভালো করবো। এই চিন্তাধারা থেকেই এই পদ্ধতিতে মাছ চাষে আগ্রহী হই। শুধু তা-ই নয়, এখানকার উৎপাদিত মাছের মান বিশ্বমানের এবং আমরা মধ্যপ্রাচ্যসহ ইউরোপের বাজারে এসব মাছ রফতানি করতে পারবো।
তিনি আরও বলেন, এই পদ্ধতিতে মাছ চাষে প্রায় পুকুরের মতো খরচ পড়বে এবং চ্যানেলে নদীর মতো স্রোত থাকায় পুকুরের চেয়ে কম সময়ে মাছ উৎপাদন এবং বাজারজাত করা সম্ভব হবে। চাষিরা সামর্থ্য অনুযায়ী বেশি চ্যানেল না করে ২টি বা ৩টি বা ৫টি চ্যানেল করেও মাছ চাষ করতে পারবেন। এতে রক্ষা পাবে আমাদের কৃষি জমি। আর চাঁপাইনবাবগঞ্জ তো বটেই, দেশে চাহিদা পূরণ করে অবশিষ্ট মাছ ইউরোপের বাজারে রফতানি করার সুযোগ সৃষ্টি হবে।
আকবর হোসেন আরও বলেন, চায়নায় এই পদ্ধতি এখন বেশ জনপ্রিয়। সেখানে প্রায় ৩ হাজার চ্যানেলে এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ হচ্ছে। ভারতে রয়েছে ৩টি এবং পাকিস্তানে রয়েছে ৪টি চ্যানেল। তবে দক্ষিণ এশিয়ায় আমাদেরটি সবচেয়ে বড় চ্যানেল।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. আমিমুল এহসান জানান, ‘আইপিআরএস’ জলবায়ু ও পরিবেশবান্ধব এবং টেকসই পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে জলাশয়ের পুরো জমিকে আরসিসি কাঠামো নির্মাণ করে নদীর মতো বৃত্তাকার চ্যানেলে ভর্তি পানিতে যান্ত্রিক উপায়ে স্রোত তৈরি করায় এখানকার উৎপাদিত মাছের স্বাদ হবে নদীর মাছের মতো। যান্ত্রিক উপায়ে পুকুরের যাবতীয় বর্জ্য অপসারণের ব্যবস্থা থাকায় ক্ষতিকর অ্যামোনিয়া গ্যাসমুক্ত হওয়ায় মাছের রোগব্যাধিও কম হবে। এছাড়া কৃত্রিম উপায়ে পানিতে অক্সিজেন মিশ্রণের ব্যবস্থা থাকায় অল্প জায়গা ও পানিতে বেশি ঘনত্বে মাছ চাষ করা সম্ভব। যা অন্য কোনও পদ্ধতিতে সম্ভব নয়।
তিনি আরও বলেন, যেহেতু দেশে ভূমির পরিমাণ কম এবং ছোট দেশ; সেহেতু অল্প জায়গা থেকে বেশি মাছ উৎপাদনই আমাদের লক্ষ্য। এখানে ২৫ মিটার লম্বা, ৫ মিটার প্রস্থ এবং ২ মিটর গভীর অর্থাৎ-২৫০কিউবিক মিটারের মধ্যে প্রতিটি চ্যানেল থেকে প্রায় ৩২ টন মাছ উৎপাদন করা সম্ভব।
দেশে মাছ উৎপাদনে এবং নদীর মাছের মতো স্বাদ পেতে ‘আইপিআরএস’ পদ্ধতি নতুন দিগন্তের সূচনা করবে, এমনটাই প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।