৪৯ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার, কারাগারে না.গঞ্জের সাবেক ওসি

 

ওসি কামরুল৪৯ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধারের মামলায় নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার সাবেক ওসি কামরুল ইসলাম গত ৮ দিন ধরে কারাগারে রয়েছেন। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন অনেকটা গোপনেই তাকে কারাগারে পাঠায়। বিষয়টি বৃহস্পতিবার (২৯ অক্টোবর) জানাজানি হলে নারায়ণগঞ্জে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।

জানা যায়, ইয়াবা পাচারের মামলায় আসামি কামরুল ইসলাম গত ২২ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। পরে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠান। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নারায়ণগঞ্জ কোর্ট পুলিশের ইন্সপেক্টর আসাদুজ্জামান ও জেলা আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি (পিপি) ওয়াজেদ আলী খোকন ।

জেলা আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি (পিপি) ওয়াজেদ আলী খোকন জানান, সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাওসার আলমের আদালত জামিন নামঞ্জুর করে পুলিশ কর্মকর্তাকে কারাগারে পাঠান।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ৭ মার্চ নারায়ণগঞ্জ ডিবি পুলিশ সদর থানার এএসআই মোহাম্মদ সরওয়ার্দীর বাসা থেকে ৫০ হাজার পিস ইয়াবা ও পাঁচ লাখ টাকা উদ্ধার করে। পরে এ ঘটনায় মামলা হয়। ওই মামলার আসামি পুলিশ সদস্য আসাদুজ্জামান ও মোহাম্মদ সরওয়ার্দী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে বলেন, এটি তারা নারায়ণগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নির্দেশে করেছেন। ওসির নির্দেশেই টাকা ও ইয়াবা রেখে আসামিদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে গত ২০ ফেব্রুয়ারি বিপুল পরিমাণ মাদক ও টাকাসহ ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া কনস্টেবল আসাদুজ্জামানের জামিন শুনানিকালে মাদক চোরাচালানের সঙ্গে সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুল ইসলামের সম্পৃক্ততায় বিস্ময় প্রকাশ করেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ ইয়াবাসহ গ্রেফতার হওয়ার ঘটনায় দুই পুলিশ সদস্যের ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এই মাদক মামলার সঙ্গে ওসি কামরুলের সম্পৃক্ততা থাকা সত্ত্বেও তাকে আসামি না করায় অবাক হন হাইকোর্ট।

গত ২৫ ফেব্রুয়ারি মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা নারায়ণগঞ্জ সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজিমউদ্দিন আজাদকে তলব করেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে সশরীরে হাজির হয়ে মামলার তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার নির্দেশ দেন আদালত। এদিকে সিআইডির ওই কর্মকর্তা তদন্ত শেষে ওই ঘটনায় ওসি কামরুলের সম্পৃক্ততা পাননি উল্লেখ করে চার্জশিট থেকে তাকে অব্যাহতি দেন। গত বছরের ৪ মার্চ উচ্চ আদালতের নির্দেশে সদর থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয় ওসি কামরুল ইসলামকে। এর এক মাসের মাথায় ২ এপ্রিল আবারও একই পদে বহাল করা হয় তাকে। এরপর তিন মাস ওসির দায়িত্ব পালন করেন তিনি। পরে তাকে বদলি করে জেলা গোয়েন্দা শাখায় (ডিবি) আনা হয়।

পরবর্তীতে গত ২৯ আগস্ট হাইকোর্ট ইয়াবা পাচারের মামলাটি পুনঃতদন্ত করে দুই মাসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নারায়ণগঞ্জ সিআইডির সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজিম উদ্দিন জানান, হাইকোর্টের নির্দেশে পুনঃতদন্তে ইয়াবা পাচারের সঙ্গে নারায়ণগঞ্জ সদর থানার সাবেক ওসি কামরুল ইসলামের সম্পৃক্ততা পাওয়ায় দেড় মাস আগে তার নাম অন্তর্ভুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়। ওই মামলায় গত ২২ অক্টোবর সাবেক ওসি কামরুল ইসলাম আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। আদালত শুনানি শেষে তাকে কারাগারে পাঠান।

নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক (সুপার) মো. মাহবুুবুল আলম জানান, ইয়াবা মামলায় ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার অফিসার কামরুল ইসলাম কারাগারেই আছেন।