মামলার বিবরণে জানা যায়, রংপুর নগরীর মুলাটোল হকের গলি এলাকার বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা আরজুমান বানু ওরফে মিনু গত ১৯ মে দিবাগত রাতে নিজ বাড়িতে খুন হন। খুনের ঘটনায় ভিকটিমের একমাত্র মেয়ের পরিবর্তে, তার মেয়ের সাবেক স্বামী মোহনকে বাদী বানিয়ে থানায় হত্যা মামলা রেকর্ড করা হয়। বিষয়টি জানাজানি হলে বিভিন্ন মহল ও এলাকায় ব্যাপক আলোড়নের সৃষ্টি হয়।
নিহত মিনু বেগমের মেয়ে তানিয়া মাহাজাবিন সুমী অভিযোগ করেন, কোনও অদৃশ্য কারণে আমার সাবেক স্বামীকে আসামি করা হয়নি। বরং আমার মাকে শাশুড়ি ও আমাকে স্ত্রী পরিচয় দিয়ে ওই দিনই পুলিশ তাকে মামলার বাদী বানিয়ে মামলা নিয়েছে।
তানিয়া মাহাজাবিন সুমী আরও অভিযোগ করেন, ঢাকায় চাকরির সুবাদে এবং করোনার লকডাউন চলার সুযোগকে কাজে লাগিয়েছে প্রভাবশালী একটি চক্র। আমার মা নিহত হওয়ার খবর জানার পর লকডাউনের কারণে রংপুরে আসার ব্যবস্থা করতে পারিনি। তবে মোবাইলফোনে বেশ কয়েকবার পুলিশকে মামলার বাদী হওয়ার জন্য অনুরোধ জানালেও পুলিশ তাতে সাড়া দেয়নি। বরং আমার সাবেক স্বামী মোহন প্রভাব খাটিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যাকাণ্ডের ঘটনাকে ভিন্নখাতে নিতে পুলিশকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন।
সুমীর দাবি, লকডাউনকে কাজে লাগিয়ে তার মাকে হত্যার পর নগদ অর্থসহ সোনার গহনা ও মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করেছে তার সাবেক স্বামী। আর পরে পুলিশকে ম্যানেজ করে সে নিজেই মামলার বাদী হয়েছে।
তিনি বলেন, পরে গত ১২ আগস্ট সুমী রংপুর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মোহনকে প্রধান আসামি করে একটি মামলা দায়ের করি (পিআর নম্বর- ৬০/২০২০)। দায়ের করা অভিযোগ আদালত আমলে নেন। আদালতের বিচারক কোতোয়ালি থানায় দায়ের করা মামলা তদন্ত এবং আদালতে আমার দায়ের করা অভিযোগ একইসঙ্গে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। তবে আদালতের এমন নির্দেশ অমান্য করে হত্যা মামলার তদন্ত না করেই আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ।
পরে কোতোয়ালি থানা পুলিশের দাখিল করা অভিযোগপত্রের নারাজি চেয়ে আদালতে আবেদন করেন সুমী। মামলার বাদীর আবেদন আমলে নিয়ে আদালত শুনানির দিন নির্ধারণ করেন। বৃহস্পতিবার (২৬ নভেম্বর) শুনানি শেষে বিচারক দুটি মামলার তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রংপুর পিবিআইকে নির্দেশ দেন।
সুমীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া সাংবাদিকদের বলেন, হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ও মামলার তদন্ত না করে পুলিশ চার্জশিট দিয়েছে। তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, এটি মোটেও কাম্য নয়। তাই আমরা আদালতে ২ মামলার তদন্ত যাতে একসঙ্গে হয়, সেজন্যে বাদীর পক্ষে আবেদন করেছি। আদালত শুনানি শেষে পিবিআইকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।
সুমির দাবি, বিচ্ছেদের প্রতিশোধ নিতেই মোহন তার মাকে হত্যা করেছেন। তদন্তে প্রকৃত খুনি কে তা বেরিয়ে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
অন্যদিকে অভিযুক্ত মোহনের কাছে মামলার বাদী হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি কোনও উত্তর দিতে চাননি। মামলার তদন্তেই কে মূল দোষী তা বেরিয়ে আসবে বলে জানান তিনি।