আহমদ শফীর স্বাভাবিক মৃত্যুকে ঘিরে মিথ্যাচার হচ্ছে: বাবুনগরী

হাটহাজারী মাদ্রাসা মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন

হেফাজতে ইসলামের প্রয়াত আমির শাহ আহমদ শফীর স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেছেন সংগঠনটির বর্তমান আমির জুনায়েদ বাবুনগরী। তিনি বলেছেন, ‘আল্লামা শাহ আহমদ শফীর মৃত্যু স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু আমরা লক্ষ করছি, তার স্বাভাবিক মৃত্যুকে নিয়ে একটি কুচক্রী মহল ষড়যন্ত্রমূলকভাবে নির্জলা মিথ্যাচার করে যাচ্ছে। হজরতের ইন্তেকালের তিন মাস পর ওই কুচক্রী মহল তার মৃত্যুকে অস্বাভাবিক আখ্যা দিয়ে একটি মিথ্যা মামলাও দায়ের করেছে। দায়েরকৃত মামলাটি রাজনৈতিক চক্রান্ত এবং দেশের স্থিতিশীল অবস্থা বিনষ্ট করার দুরভিসন্ধি বলে আমরা মনে করছি। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই।’

বুধবার (২২ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে হাটহাজারী মাদ্রাসা মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। শাহ আহমদ শফীর স্বাভাবিক মৃত্যু নিয়ে ‘মিথ্যাচার’, হাটহাজারী মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ‘ষড়যন্ত্র’ ও হেফাজত নেতাদের জড়িয়ে দায়ের করার মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন হেফাজতে ইসলামের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ডা. নরুল আফছার আজহারী।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, শাহ আহমদ শফীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর অভিযোগ এনে দায়ের করা মামলাটি রাজনৈতিক চক্রান্ত। এই মামলা মাদ্রাসার শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিনষ্ট করা এবং হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দকে হয়রানি করার হীন ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছু নয়।

সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, মাদ্রাসার তৎকালীন শিক্ষা পরিচালক মুফতি নুর আহমদকে পাশ কাটিয়ে সহকারী শিক্ষা পরিচালক আনাস মাদানী দীর্ঘদিন থেকে ছাত্রদের নানাভাবে হয়রানি করে আসছিলেন। তিনি একক সিদ্ধান্তে ছাত্রদের ভর্তি ফরম এবং দাওরায়ে হাদিস ছাত্রদের বোর্ড পরীক্ষার প্রবেশপত্র আটকে রাখেন। অনেক ছাত্রের বোর্ডিংয়ের খাবার এবং আবাসিক সিট অন্যায়ভাবে বাতিল করেন। তার অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারী কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ  হয়ে আহমদ শফীর ইন্তেকালের দুই দিন আগে ১৬ সেপ্টেম্বর ছাত্ররা বিক্ষোভ শুরু করেন। ওই দিন বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা তাদের সুনির্দিষ্ট দাবি দাওয়া তৎকালীন মুঈনে মুহতামিম শেখ আহমদের মাধ্যমে শাহ আহমদ শফীর কাছে পেশ করেন। তিনি শূরা আহ্বান করে মাওলানা আনাস মাদানীকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেন এবং ছাত্রদের দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দেন। বাকি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে ১৯ সেপ্টেম্বর পুনরায় শূরার অধিবেশন আহ্বান করেন। এই ঘোষণার পর মাদ্রাসায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরে আসে।

কিন্তু এর একদিন পর ১৭ সেপ্টেম্বর আনাস মাদানী শূরার সদস্যদের সিদ্ধান্তকে অমান্য করে অনির্দিষ্টকালের জন্য মাদ্রাসা বন্ধ করে দেওয়ার পাঁয়তারা করলে ছাত্ররা পুনরায় ব্যাপকভাবে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। তখন শাহ আহমদ শফী পুনরায় শূরা আহ্বান করেন। সারা দিন নানা উদ্বেগ উৎকণ্ঠার পর বাদ মাগরিব উপস্থিত শূরা সদস্যরা আহমদ শফীসহ মাদ্রাসার সিনিয়র শিক্ষকদের নিয়ে বৈঠকে বসেন। বৈঠকে ছেলে মাওলানা আনাস মাদানীর দীর্ঘদিনের স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম, ছাত্র-শিক্ষকদের প্রতি জুলুম নির্যাতনসহ নানা অভিযোগ আহমদ শফীর সামনে তুলে ধরলে তিনি বাকরুদ্ধ  হয়ে পড়েন। যার ফলে তিনি আনাস মাদানীর ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে স্বেচ্ছায় স্বজ্ঞানে মাদ্রাসার মহাপরিচালকের পদ থেকে পদত্যাগ করে শূরার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। কিন্তু শূরা সদস্যরা তা গ্রহণ করতে রাজি হননি। পদত্যাগে আহমদ শফী দৃঢ় প্রতিজ্ঞ থাকায় শূরা সদস্যরা তাকে সদরে মুহতামিম হিসেবে মনোনীত করেন। ইতোমধ্যে তিনি অসুস্থবোধ করলে শূরা সদস্যরা তাকে হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করেন। উনাকে চট্টগ্রাম মেডিক্যালে ভর্তি করানো হয়। পরদিন ১৮ সেপ্টেম্বর উনাকে সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার আজগর আলী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ভর্তি করার পর সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটের দিকে তিনি ইন্তেকাল করেন।

সংবাদ সম্মেলনে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী, দারুল উলুম হাটহাজারী মাদ্রাসার শূরা কমিটির সদস্য নোমান ফয়েজী, ইয়াহিয়া, মাদ্রাসার সিনিয়র শিক্ষক মুফতি জসিম উদ্দিন, হেফাজতের সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মীর ইদরিসসহ হেফাজত নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

 

আরও পড়ুন-

আহমদ শফীর মৃত্যু: মামুনুলসহ ৩৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ

‘আহমদ শফী জামায়াত-শিবিরের পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের শিকার’

আল্লামা শফীর মৃত্যুর পেছনে ‘উগ্রপন্থীরা’, থমকে আছে বেফাকের তদন্ত