গৃহহীনদের পাশে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেক

মুজিববর্ষ উপলক্ষে সরকারের গৃহীত গৃহহীনদের জন্য গৃহনির্মাণ প্রকল্পে রণচণ্ডী এলাকায় ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য গৃহনির্মাণের বরাদ্দ আসে। কিন্তু সেখানে সরকারের খাসজমি না থাকায় প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। বিষয়টি জানতে পেরে এগিয়ে আসেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেক। গৃহহীনদের জন্য নিজ বাড়ির পাশে ১০৫ শতাংশ জমি দান করেছেন। সেই দান করা জমিতেই গড়ে উঠছে ভূমিহীন ও দুস্থ পরিবারের জন্য ৩২টি দুই কক্ষবিশিষ্ট সেমি পাকা ঘর। তিনি ঘর বানানোর ৯০ শতক জমির সঙ্গে ওই গুচ্ছগ্রামে যাতায়াতের রাস্তার জন্য ১৫ শতক জমি দান করেছেন। এছাড়া ঘর নির্মাণের স্থানে মাটি ভরাটে ১৫ শতক জমিতে পুকুর খননের জন্য দিয়েছেন তিনি।

আব্দুল মালেকের বাড়ি জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের রণচণ্ডী গ্রামে। স্ত্রী, চার ছেলে ও আট কন্যা সন্তানের জনক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মালেক ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম’ ভাষণে উদ্ধুদ্ধ হয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। জীবনবাজি রেখে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছেন। বঙ্গবন্ধুকে ভালোবেসে যুদ্ধে যান আর তারই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গৃহহীনদের জন্য গৃহনির্মাণের যে উদ্যোগ নিয়েছেন তার সম্মানে তিনি নিজ ইচ্ছায় এই জমি দান করেন।

তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী গরিব দুঃস্থ মানুষকে ঘর করে দিলে তারা সুখে শান্তিতে বাস করবে। তারা সরকার ও আমাকে দোয়া করবে এই মনে করেই জমি দান করেছি। গরিব মানুষরা আমার বাড়ির পাশে পাকা বাড়িতে থাকবে, প্রধানমন্ত্রী সাহায্য সহযোগিতা করবেন, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এটিই আমার মনের কামনা ছিল।’

PANCHAGARH FF ABDUL MALEK PIC-03জমি দান করার বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ‘জমি দান করার আগে আমি আমার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। তারা আমাকে সম্মতি দিয়েছে। মন খারাপ করে করলে তো দান হবে না বরং পাপ হবে। আমি মন খোলাসা করে দান করেছি। যারা ঘর পেয়েছে তারা জমিটা কার শুনে অনেকে আসে, আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়, আপনি যে এতবড় একটা কাজ করেছেন আল্লাহ আপনাকে হায়াত দারাজ করুক এমন নানা দোয়া করে। আমি দিয়েছি বলেই পাচ্ছি। দিলে পাওয়া যায়। আর মানুষ মনে করে আমি লস করলাম, আসলে কিন্তু লস হবে না। আমি এই দিক দিয়ে দিলাম, আল্লাহ আমাকে আরেক দিক দিয়ে দেবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই উদ্যোগে জমি দান করতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত।’

আব্দুল মালেকের ছেলে আবদুর রহমান বলেন, ‘জমি দান করার ইচ্ছার বিষয়টি বাবা আমাদের সবার সঙ্গে আলোচনা করেন। বাবার মতের সঙ্গে আমরা সবাই একমত পোষণ করি। এটা তো ভালো কাজ। মানুষের জন্যই তো মানুষ। এজন্য আমরাও সবাই আনন্দিত। বাবার এই ইচ্ছাকে আমরা সাধুবাদ জানাই।’

তেঁতুলিয়া উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে তেঁতুলিয়ায় ‘জমিও নেই বাড়িও নেই’ এমন ১৪২টি পরিবারকে ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হবে। কিন্তু সরকারি খাস জমি না থাকায় গুচ্ছগ্রাম নির্মাণ বন্ধ হয়ে যায়। জমির অভাবে গৃহনির্মাণ বন্ধ হয়ে যাওয়ার বিষয়টি টের পেয়ে আবদুল মালেক ৯০ শতাংশ জমি সরকারকে দান করার সিদ্ধান্ত জানান। দুই কক্ষবিশিষ্ট সেমি পাকা ঘর, রান্নাঘর, বারান্দা ও  শৌচাগার, সুপেয় পানির জন্য একটি নলকূপ স্থাপনে সরকারিভাবে এক লাখ ৭১ হাজার টাকা বরাদ্দ রয়েছে। এ মাসেই ঘর নির্মাণকাজ শেষ হলে গরিব দুস্থ পরিবারের মাঝে হস্তান্তর করা হবে।

তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সোহাগ চন্দ্র সাহা বলেন, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেক সত্যিকারের একজন দেশপ্রেমিক। বঙ্গবন্ধু আর দেশের প্রতি তার যে ভালোবাসা, তা প্রশংসনীয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাজের প্রতি দরদ দেখিয়ে তিনি স্বপ্রণোদিত হয়ে গত নভেম্বর মাসে জমিটি দান করেন। আমরা তার প্রতি কৃতজ্ঞ। সরকারের ভালো কাজের অংশীজন হয়ে জমি দান করায় আমরা এই গুচ্ছগ্রামকে তার নামানুসারে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা মালেক নগর গুচ্ছগ্রাম’ নামকরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’