অন্তঃসত্ত্বা ভাবিকে হত্যার দায়ে দেবরের যাবজ্জীবন

চাঁদপুরে অন্তঃসত্ত্বা ভাবি শারমিন আক্তারকে হত্যার দায়ে দেবর ইয়াছিন মিজিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন চাঁদপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালত। রায়ে আসামিকে ১০ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়।  রবিবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বিকালে আসামির উপস্থিতিতে এই রায় ঘোষণা করেন বিচারক এসএম জিয়াউর রহমান।

২০১৭ সালে ৫ সেপ্টেম্বর রাতে এই ঘটনা ঘটে। হত্যার শিকার শারমিন তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। এ ঘটনায় ৬ সেপ্টেম্বর চাঁদপুর মডেল থানায় শারমিনের বাবা তাজুল ইসলাম পাটওয়ারী বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মো. ইয়াছিন মিজি (২২) চাঁদপুর সদর উপজেলার রামচন্দ্রপুর এলাকার আবদুর রহিম মাওলানার ছেলে। হত্যার শিকার শারমিন আক্তার আসামির বড় ভাই ইউসুফ মিজির স্ত্রী।

মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১৪ সালে রামচন্দ্রপুর এলাকার আবদুর রহিমের সৌদি আরব প্রবাসী ছেলে ইউসুফ মিজির সঙ্গে ফরিদগঞ্জ উপজেলার উত্তর কেরোয়া এলাকার তাজুল ইসলাম পাটওয়ারীর মেয়ে শারমিনের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই ইউসুফের ছোট ভাই ইয়াছিন বিদেশ যাওয়ার জন্য তার ভাইকে চাপ দিতে থাকে। দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও তাকে বিদেশে না পাঠানোয় এজন্য কারণে ভাবিকে দায়ী করে ইয়াছিন। তাকে বিদেশ নেওয়া সম্ভব না হওয়ায় তাদের সংসারে কলহ লাগে। এ নিয়ে তাদের পারিবারিকভাবে একাধিকবার সালিশ দরবারও করা হয়। একপর্যায়ে ইয়াছিন বাহরাইনে পাড়ি জমায়। এর পরে ২০১৭ সালে ৩ জুলাই সে দেশে ফিরে আসে এবং ভাই-ভাবীকে বিভিন্নভাবে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখাতে থাকে। ঘটনার দিন রাতে ইয়াছিন বড় ভাই ইউসুফের বাড়ি যায় এবং তার ভাবি শারমিনকে একা পেয়ে ছুরি দিয়ে তলপেটে উপর্যুপরি আঘাত করে পালিয়ে যায়। পরে শারমিনকে দ্রুত তাকে উদ্ধার করে চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) মোক্তার আহমেদ অভি বলেন, ‘তিন বছরের বেশি সময় মামলাটি চলা অবস্থায় ১৮ জন সাক্ষীর মধ্যে আসামির বাবা, মা ও বোনসহ ১৬ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন আদালত। সাক্ষ্য-প্রমাণ ও মামলার নথিপত্র পর্যালোচনা করে আদালত এ রায় দেন।

আসামিপক্ষের আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট মাসুম ভুঁইয়া ও সফিকুল ইসলাম ভুঁইয়া।

মামলার বাদী তাজুল ইসলাম পাটওয়ারী বলেন, ‘আমি আমার মেয়ে হত্যার সঠিক বিচার পাইনি। আমি ন্যায়বিচারের জন্য উচ্চ আদালতে যাবো।’