হাইকোর্টের নির্দেশ উপেক্ষা করে জমি ভরাটের অভিযোগ

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের কায়েতপাড়া ইউনিয়নে হাইকোর্টের নির্দেশ উপেক্ষা করে ভূমিদস্যু চক্র প্রায় সাড়ে সাত হাজার বিঘা কৃষিজমি ভরাটের অভিযোগ উঠেছে। রবিবার (২৭ জুন) দুপুরে  নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাব ভবনের ষষ্ঠ তলায় এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কায়েতপাড়া ভূমি দস্যু প্রতিরোধ আন্দোলনের আহ্বায়ক মঈন উদ্দিন আহমেদ মানিক। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘কায়েতপাড়া ইউনিয়নের ১৩টি মৌজায় ৭৫০০ বিঘা জমির মধ্যে ৮০ শতাংশ কৃষিজমি। এ এলাকার দুই লাখ মানুষ এসব  জমিতে তিন ফসলি ঊর্বর জমিতে চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। প্রায় নয় মাস আগে থেকে ভূমিদস্যু চক্র ৪২টি ড্রেজার দিয়ে বালু নদী ও শীতলক্ষা নদী দিয়ে বালু এনে এসব জমি ভরাট করা শুরু করে। অথচ তারা এসব জমি কেনেনি। জেলা প্রশাসক ও পরিবেশ অধিদফদরের অনুমতি নেয়নি। তারা এসব জমিতে সেনাবাহিনী ও পুলিশের হাউজিং হবে বলে জানিয়ে ভরাট করে দখলের চেষ্টা করে। কিন্তু আমরা সেনাবাহিনী ও পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে দেখেছি এখানে তাদের হাউজিং প্রজেক্টের কোনও পরিকল্পনা নেই। এ ব্যাপারে ভূক্তভোগিদের পক্ষ থেকে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, পরিবেশ অধিদফতর, উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে লিখিতভাবে অবহিত করা হলেও তারা এ ব্যাপারে কোনও ব্যবস্থা নেননি। পরে আমরা এ ব্যাপারে হাইকোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করলে হাইকোর্ট এখানে স্থিতাবস্থা জারি করেন এবং এলাকার পরিস্থিতি সরেজমিন দেখে জেলা প্রশাসনকে রিপোর্ট প্রদান করতে বলেন। কিন্তু জেলা প্রশাসন এ রিপোর্ট প্রদানে কালক্ষেপণ করছে।’

সংবাদ সম্মেলনে সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি বলেন, ‘জেলা প্রশাসককে ওই জমির বাস্তব পরিস্থিতি সম্পর্কে দুই সপ্তাহের মধ্যে একটি রিপোর্ট প্রদান করতে বলেন হাইকোর্ট। কিন্তু পরিস্থিতি দেখে এখানে জেলা প্রশাসন আছে এমন কোনও প্রমাণ পাওয়া যায় না। যদি থাকে তাহলে এ জেলায় এমন একটি হরিলুট চলতে পারে না। যখন জেলা প্রশাসকরা এসব জমি দখলকারিদের ব্যাপারে নিশ্চুপ থাকেন তখন বুঝে নিতে হয় এখানে লেনদেনের বড় বিষয় চলছে। এসব ভূমি দস্যুরা প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণ করে।’ তিনি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কায়েতপাড়া ইউনিয়নের পরিস্থিতি সম্পর্কে যথাযথ রিপোর্ট দিতে জেলা প্রশাসকের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘অতীতে আমরা দেখেছি এসব ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসকরা মিথ্যা রিপোর্ট দিয়েছেন।’

সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন– নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট এ বি সিদ্দিক। উপস্থিত ছিলেন– জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি হাফিজুল ইসলাম, জেলা বাসদের সাবেক সমন্বয়ক আবু নাঈম খান বিপ্লব, জেলা গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক তরিকুল সুজন প্রমুখ।

এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ বলেন, ‘আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রতিবেদন হাইকোট বিভাগের সংশ্লষ্ট আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। আদালত আমাদের যে নির্দেশনা দেবেন সেই আলোকে আমরা ব্যবস্থা গ্রহন করবো। আদালত যদি এসব বালি ভরাট বন্ধ করার বা প্রকল্পের কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেন সেটি  বাস্তবায়ন করতে আমরা প্রস্তুত আছি।’