পোশাক কারখানার কর্মীদের লাগাতার বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ

গাজীপুরে তিন বছরের বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধসহ নানা দাবিতে তৃতীয় দিন বৃহস্পতিবারও দিনভর বিক্ষোভ করেছেন এক পোশাক কারখানার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বিক্ষুব্ধ কর্মচারীরা সকাল থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত ঢাকা-গাজীপুর সড়ক অবরোধ করে রাখেন। এতে আটকে পড়ে শতাধিক যানবাহন। গাজীপুর শহরে প্রবেশের প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি গত কয়েকদিন ধরে অবরোধ করে রাখায় জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।

গাজীপুর শিল্প পুলিশের পরিদর্শক সমীর চন্দ্র সূত্রধর জানান, গাজীপুর মহানগরীর বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) সামনে লক্ষ্মীপুরা এলাকার স্টাইল ক্র্যাফট পোশাক কারখানার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সকালে কারখানার গেটে এসে জড়ো হয়ে কর্মবিরতি শুরু করেন। এ সময় তারা তিন বছরের বকেয়া পাওনাদি পরিশোধসহ নানা দাবিতে বিক্ষোভ করতে থাকেন। একপর্যায়ে তারা সকাল সাড়ে ৮টার দিকে কারখানার সামনে ঢাকা-জয়দেবপুর সড়কের উপর অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে অবরোধকারীদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেও তারা সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত অবরোধ তুলে নেয়নি। ফলে অবরোধের কারণে সড়কের উভয় দিকে অ্যাম্বুলেন্সসহ শতাধিক যানবাহন আটকা পড়ে। ওই কারখানার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের পাওনাদি পরিশোধের দাবিতে গত কয়েকদিন ধরে প্রতিদিন সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করে আসছেন। এ ব্যাপারে গার্মেন্টস মালিকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোনও সুরাহা করা সম্ভব হচ্ছে না।

স্টাইল ক্র্যাফট পোশাক কারখানার কর্মচারীদের বিক্ষোভস্থানীয়রা জানান, দূরত্ব ও যানজট এড়াতে রাজধানী ঢাকাকে পাশ কাটিয়ে গাজীপুর শহর হয়ে এ সড়ক পথে দেশের পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলের পণ্যবাহীসহ বিভিন্ন যানবাহন পশ্চিম ও উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন রুটে চলাচল করে। এছাড়াও শহরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে করোনা আক্রান্তসহ বিভিন্ন রোগীদের ওই পথে আনা-নেওয়া করা হয়। ওই পথেই পুলিশ ও প্রশাসনের বিভিন্ন অফিসে আসা যাওয়াও করতে হয় অনেককেই। ফলে ওই কারখানার কর্মীদের প্রায়ই সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করার কারণে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় ওই পথে চলাচলকারীদের। পায়ে হেঁটে বা বিকল্প পথে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে গন্তব্যে যাচ্ছেন অনেক ভুক্তভোগী। বিষয়টি সুরাহার জন্য কোনও মহলই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে না।

পুলিশ ও আন্দোলনরতরা জানায়, স্টাইল ক্র্যাফট পোশাক কারখানায় প্রায় সাড়ে ৭শ’ কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। এ কারখানার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চলতি বছরের মার্চ, মে ও জুন মাসসহ গত সেপ্টেম্বর মাসের পূর্ণ বেতন-ভাতা সহ ২০১৯ সালের ডিসেম্বর, ২০২০ সালের মার্চ ও আগস্ট মাসের শতকরা ৫০ ভাগ, অক্টোবর মাসের ৩৫ ভাগ, নভেম্বর মাসের ১৫ ভাগ বেতন পাওনা রয়েছে। এ ছাড়াও কারখানার কর্মচারীরা ইনক্রিমেন্টসহ তাদের চার বছরের বাৎসরিক ছুটির ও দুই বছরের ঈদ বোনাসের টাকা পাওনা রয়েছে। তারা বেশ কিছুদিন ধরে এসব পাওনাদি পরিশোধের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়ে আসছেন।

বিক্ষুব্ধ কর্মীরা জানান, কারখানা কর্তৃপক্ষ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাওনাদি পরিশোধের একাধিকবার তারিখ ঘোষণা করলেও তা করেননি। কারখানার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পাওনাদি পরিশোধের দাবিতে গত ৬ জুলাই থেকে লাগাতার কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ করে আসছেন। সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী, এক মাসের বেতন-ভাতা গত মঙ্গলবার এবং অপর দুই মাসের পাওনাদি বৃহস্পতিবার পরিশোধের কথা থাকলেও পরিশোধ করেনি। কারখানার মালিকের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি রিসিভ করছেন না। উপায়ন্তর না পেয়ে কর্মীরা সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করছেন।