নির্ঘুম রাত কাটছে গোলজান বিবির

এক সময় ভিটেবাড়ি, ফসলি জমি সবই ছিল গোলজান বিবির। বছরের পর বছর ধরে নদী ভাঙনে সেগুলো হারিয়েছেন। সম্প্রতি ভৈরব নদীর ভাঙনে তার শেষ সম্বল খুপড়ি ঘরটিও ঝুঁকিতে পড়েছে। যেকোনও সময় সেটি নদীতে বিলীন হয়ে যেতে পারে। এ নিয়ে শঙ্কায় দিন কাটছে গোলজান বিবির। ভাঙন আতঙ্কে রাতেও ঘুমাতে পারছেন না।

গোলজান বিবির স্বামী জিলকত আলী মারা গেছেন ২৫ বছর আগে। বাগেরহাট সদর উপজলার বারুইপাড়া ইউনিয়নের কার্তিকদিয়া পূর্বপাড়া গ্রামে তার বাস।আপনজন বলতে আছে একমাত্র মেয়ে। তারও বিয়ে হয়ে গেছে। ভৈরব নদীর তীরের একটি খুপড়ি ঘরে এখন একাই থাকেন ৭০ বছর বয়সী গোলজান বিবি।

তিনি জানান, এক সময় কার্তিকদিয়া পূর্বপাড়া গ্রামে তাদের সব ছিল। বাপ-দাদার ভিটেবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। নদী তীরের খুপড়ি ঘরই তার শেষ সম্বল। সেটাও নদী ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। প্রতিবেশী ও নিজের চেষ্টায় বাঁধ দিয়ে ঘর রক্ষার চেষ্টা করছেন। তবে যেকোনও সময় সেটা নদীতে বিলীন হয়ে যেতে পারে।

ভৈরব নদীর ভাঙনে গোলজান বিবির খুপড়ি ঘরটি ঝুঁকিতে পড়েছে

শুধু গোলজান বিবি নয়, সদর উপজলার বিষ্ণুপুর ও বারইপাড়া ইউনিয়নে প্রায় অর্ধশতাধিক পরিবারে ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে ঘরবাড়ি রক্ষায় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।

সরেজমিন সদর উপজলার বিষ্ণুপুর ও বারুইপাড়া ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, বিষ্ণুপুরের কুরামারা গ্রামের ভৈরব নদীর পাড়ে বড় বড় ফাটল ধরেছে। নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে ইউনিয়নর আলার ঘাট, আমতলা ঘাট, জলাপাড়া, দারাগার ঘাট ও চড়কুলিয়া দাইরসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের বসতভিটা ও ফসলি জমি। অনেকেই ভিটেবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন।

কুরামারা গ্রামের বাসিন্দা ইসমাইল শেখ বলেন, ‌‘এক সময় আমাদের বাড়ির পাশে হাট বসতো। নদী ভাঙতে ভাঙতে সব শেষ হয়ে গেছে। বাপ-দাদার বসতবাড়ি, ফসলি জমি সব শেষ।’

ভাঙন ঝুঁকিতে প্রায় অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি

তিনি আরও বলেন, ‘কিছুদিন আগে হঠাৎ নদী পাড়ে ফাটল দেখা দেয়। এমন অবস্থায় মাথা গোঁজার ঠাঁইটুুকু রক্ষা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।’

একই এলাকার আমেনা বেগম বলেন, ‘নদী ভাঙতে ভাঙতে আমার ঘরের কাছে চলে এসেছে। আর এক হাত বাকি। ঘরের মধ্যেও ফাটল ধরেছে। যেকোনও সময় ঘর ভেঙে নদীতে চলে যাবে।’

বিষ্ণপুর ইউপি চেয়ারম্যান শংকর চক্রবর্তী বলেন, ‘আমার ইউনিয়নে আলোর ঘাট, আমতলা ঘাট, জেলাপাড়া, দারোগার ঘাট ও চড়কুলিয়া দাইরসহ বিভিন্ন গ্রামে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে বেশকিছু এলাকার ফসলি জমি ও গাছপালা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। আমি স্থানীয় প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে জনগণের দুর্ভোগ লাঘবে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’

নদীতে বিলীন হয়ে গেছে কয়েকটি গ্রামের বসতভিটা ও ফসলি জমি

বাগেরহাট সদর উপজলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ মুছাবেরুল ইসলাম বলন, সম্প্রতি অতি বৃষ্টির কারণে ভৈরব নদীর তীরবর্তী কিছু এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করে লিখিত প্রতিবেদন জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠানো হবে। 

সেই সঙ্গে উপজলা পরিষদ থেকে ছোট ছাট প্রকল্পের মাধ্যমে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে দ্রুত ভাঙনকবলিত এলাকা মেরামতের আশ্বাস দেন তিনি।