নারী পর্যটককে ধর্ষণ: 'উড়োচিঠিতে মিথ্যা সাক্ষ্য'

স্বামী-সন্তানসহ কক্সবাজারে বেড়াতে যাওয়া পর্যটককে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় এবার স্বামী দাবি করেছেন, একটি "উড়োচিঠিতে হুমকি পেয়ে তার স্ত্রী আদালতে মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছেন"। কক্সবাজার থেকে সোমবার (২৭ ডিসেম্বর) ঢাকায় ফিরে এ দাবি করেন তিনি।

ভুক্তভোগী ওই নারী গত শুক্রবার কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম হামীমুন তানজীনের আদালতে জবানবন্দি দেন। জবানবন্দিতে সৈকত এলাকা থেকে তার অপহরণের বিষয়টি নেই। ওই নারী আদালতকে জানান, তাকে শহরের সি টাউন হোটেলের সামনে থেকে অপহরণ করা হয়।

ঢাকায় ফেরার পর ওই নারীর স্বামী জানান, একটি উড়োচিঠিতে হুমকি পাওয়ার কারণেই তার স্ত্রী সৈকতের লাবনী পয়েন্ট থেকে অপহরণের বিষয়টি আদালতে চেপে যান। উড়োচিঠির লেখা অনুযায়ী কাজ না করলে কক্সবাজার থেকে ভুক্তভোগীর পরিবারের কেউ বের হতে পারবে না বলে হুমকি দেওয়া হয়। তিনি দাবি করেন, ওই চিঠিতে ঘাবড়ে গিয়ে তিনি স্ত্রীকে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে রাজি করান। সে অনুযায়ী, তার স্ত্রী আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।

এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশ পরিদর্শক মো. রুহুল আমিন বলেন, ‘এ ধরনের কোনও হুমকি বা চিরকুটের কথা ভুক্তভোগী বা তার স্বামী আমাদের বলেননি। তারা ঢাকায় যাওয়ার আগেও আমাকে বিষয়টি জানাতে পারতেন।’

এর আগে, স্বামী-সন্তানসহ ২২ ডিসেম্বর সকালে ঢাকা থেকে কক্সবাজারে পৌঁছেন ওই নারী। ওঠেন শহরের হলিডে মোড়ের একটি পাঁচতলা হোটেলে। ওই দিন বিকালে স্বামী-সন্তানকে নিয়ে লাবণী বিচে যান। রাতে হোটেলে ফেরার পথে এক যুবকের সঙ্গে তার স্বামীর ধাক্কা লাগে। এতে স্বামীর সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে ওই যুবক। বাধা দিলে তার সঙ্গেও তর্কে জড়ায় যুবক। ওই সময় আরও দুই যুবক ঘটনাস্থলে এসে হাজির হয়। তারা স্বামী-সন্তানকে ইজিবাইকে তুলে দিয়ে ওই নারীকে আলাদা করে ফেলে। পরে ওই এলাকার একটি ঝুপড়ি ঘরে নিয়ে তিন জনে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। এরপর স্বামী-সন্তানকে হত্যার ভয় দেখিয়ে একটি হোটেলে নিয়ে যায়। সেখানে এক যুবক স্ত্রী পরিচয় দিয়ে তাকে হোটেলের রুমে নিয়ে আবারও ধর্ষণ করে। শেষে রুমের দরজা বাইর থেকে আটকে পালিয়ে যায়। হোটেল থেকে বেরিয়ে ৯৯৯ নম্বরে কল করেন ওই নারী। পুলিশের কোনও সহায়তা না পেয়ে র‌্যাবকে খবর দেন। তখন হোটেলে আসে র‌্যাব।

এ ঘটনায় ২৩ ডিসেম্বর রাতে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় ওই ভুক্তভোগীর স্বামী বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলায় চার জনের নাম উল্লেখসহ সাত জনকে আসামি করা হয়েছে।

নাম উল্লেখ করা চার আসামি হলেন কক্সবাজার শহরের মধ্যম বাহারছড়া এলাকার আশিকুল ইসলাম, মোহাম্মদ শফি ওরফে ইসরাফিল হুদা জয় ওরফে জয়া, মেহেদী হাসান বাবু ও জিয়া গেস্ট ইন হোটেলের ম্যানেজার রিয়াজ উদ্দিন ছোটন।

রবিবার প্রধান আসামি আশিককে মাদারীপুর থেকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। এছাড়া, এজাহারভুক্ত আরও চার জনকে গ্রেফতার করেছে কক্সবাজার পুলিশ।