ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলায় চাঁদা না পেয়ে স্বামীকে বেঁধে মারধর ও স্ত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে শ্রমিক দল ও ছাত্রদল নেতাদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় তজুমদ্দিন থানায় মামলা করা হয়েছে। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তজুমদ্দিন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মহব্বত খান।
ভুক্তভোগী দম্পতির অভিযোগ, উপজেলার শম্ভুপুর ইউনিয়নের এক যুবককে গত শনিবার রাতে বাসায় ডেকে নিয়ে চাঁদার দাবিতে রাতভর নির্যাতন চালান উপজেলা শ্রমিক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. ফরিদ উদ্দিন, তজুমদ্দিন সরকারি কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক রাসেল, তার ভাই আলাউদ্দিনসহ তাদের সহযোগীরা। একপর্যায়ে ওই ব্যক্তির স্ত্রীকে টাকা নিয়ে এসে স্বামীকে ছাড়িয়ে নিতে বলা হয়। রবিবার সকালে স্ত্রী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে স্বামীকে ছাড়িয়ে নিতে চার লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। চাঁদা না দেওয়ায় ওই যুবককে বেঁধে রেখে তার স্ত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়েছে বলে জানান ভুক্তভোগী। তিনি বলেন, ‘ভাই বলে পায়ে ধরে, কেঁদে ধর্ষকদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার আকুতি জানালেও রক্ষা পাইনি।’
নির্যাতনের শিকার স্বামী জানিয়েছেন, চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে এসএস পাইপ ও রড দিয়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত করা হয়। পরে তাকে অন্যত্র সরিয়ে স্ত্রীকে তজুমদ্দিন উপজেলা শ্রমিক দলের ১ নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফরিদ উদ্দিন, আলাউদ্দিনসহ তিন জন মিলে ধর্ষণ করেন। ধর্ষণ শেষে স্বামী-স্ত্রী দুজনকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ঘটনা কাউকে না বলার হুমকি দিয়ে সেখান থেকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
এ ঘটনার পর রবিবার সন্ধ্যায় ধর্ষণের শিকার ওই নারী দুবার আত্মহত্যার চেষ্টা করলে বাড়ির আশপাশের লোকজন তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় বাজারে এনে ঘটনাটি সবাইকে জানান। স্থানীয়দের পরামর্শে ভুক্তভোগী নারী ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিয়ে পুরো ঘটনার বিবরণ জানালে রাতে পুলিশ এসে তাদের থানায় নিয়ে যায়।
সোমবার তজুমদ্দিন থানা পুলিশ বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়ে তদন্ত করেন। তবে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
ওসি মহব্বত খান বলেন, ‘এ ঘটনায় সংঘবদ্ধ ধর্ষণের মামলা করা হয়েছে থানায়। মামলায় দুজনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ, একজনের বিরুদ্ধে ধর্ষণে সহায়তা ও তিন জনের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ আনা হয়েছে। পুলিশ আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চালাচ্ছে।’
ওসি আরও বলেন, ‘ওই নারীর স্বামী একাধিক বিয়ে করেছেন। দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গে টাকা-পয়সা নিয়ে লেনদেন ছিল। এর জেরে ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে।’
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত উপজেলা শ্রমিক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. ফরিদ উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। ঘটনার পর থেকে তার মোবাইল নম্বর বন্ধ রয়েছে।
তজুমদ্দিন সরকারি কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক রাসেল বলেন, ‘আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না। আমাকে রাজনৈতিকভাবে হেয় করার জন্য ওই ঘটনায় জড়ানোর চেষ্টা করছে একটি পক্ষ।’
স্ত্রীর সঙ্গে লেনদেন ও বিয়ের বিষয়ে মারধরের শিকার স্বামী জানান, তিনি দুই বিয়ে করেছেন। বড় স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকায় থেকে সেখানে খাবার হোটেলে কাজ করেন। ছোট স্ত্রী তজুমদ্দিনে থাকেন। কিছু দিন আগে বড় স্ত্রীকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে আসেন। গত শনিবার রাতে ছোট স্ত্রী তাকে বাসায় ডেকে নেন। সেখানে রাতের খাবার খাওয়ার সময় শ্রমিক দলের নেতা ফরিদ উদ্দিন ও ছাত্রদল নেতা রাসেলের নেতৃত্বে তাদের সহযোগীরা ঘরে ঢুকে মারধর শুরু করেন। এ সময় ছোট স্ত্রী তার সঙ্গে আর সংসার করবেন না বলে তার কাছে চার লাখ টাকা দাবি করেন নেতারা। টাকা দিতে অস্বীকার করলে রাতভর নির্যাতন চালান। একপর্যায়ে বড় স্ত্রীকে টাকা নিয়ে এসে স্বামীকে ছাড়িয়ে নিতে বলা হয়। বড় স্ত্রী এলে তাকে অন্য কক্ষে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করেন তারা। ঘটনার পর স্বামী-স্ত্রীকে ভয়ভীতি দেখিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। রবিবার সন্ধ্যায় বড় স্ত্রী দুবার আত্মহত্যার চেষ্টা করলে আশপাশের লোকজন থানায় খবর দেন। এরপর বড় স্ত্রী জাতীয় জরুরি সেবার ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিয়ে পুরো ঘটনার বিবরণ জানালে রাতে পুলিশ এসে তাদের থানায় নিয়ে যায়।