সরকারি জায়গা দখল করে ‌‘ইউএনও পার্ক’

নাটোরে রেলওয়ের প্রায় সাড়ে চার বিঘা জায়গা দখল করে পার্ক নির্মাণ করা হয়েছে। নাম দেওয়া হয়েছে ‘ইউএনও পার্ক’। শুরুতে উপজেলা পরিষদ পার্কের নির্মাণকাজে অর্থায়ন করলেও পরে নেওয়া হয়েছে ব্যক্তি শেয়ার। এরই মধ্যে দর্শনার্থীদের জন্য পার্কটি উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। অথচ এখানে পার্ক নির্মাণের জন্য অনুমতি নেওয়া হয়নি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের। 

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে বাগাতিপাড়ার তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খন্দকার ফরহাদ আহমেদ উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এই পার্কটি নির্মাণের কাজ শুরু করেন। বর্তমানে নাটোর জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তিনি। 

বাগাতিপাড়া পৌরসভার লক্ষ্মণহাটি এলাকায় বড়াল নদীর পাশে পার্কের অবস্থান। গত বুধবার পার্কটি উদ্বোধন করেন নাটোর-১ আসনের সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুল। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাগাতিপাড়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রিয়াংকা দেবী পাল ও চেয়ারম্যান অহিদুল ইসলাম গোকুল।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অহিদুল ইসলাম বলেন, রেলওয়ের প্রায় সাড়ে চার বিঘা জায়গায় পার্কটি নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু ওই ইউএনও বদলি হয়ে গেলে পার্কের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমান ইউএনওর চেষ্টায় পার্কটির অবশিষ্ট কাজ শেষ করে গত বুধবার উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। দর্শনার্থীদের জন্য টিকিটের মূল্য ধরা হয়েছে ২০ টাকা।

প্রিয়াংকা দেবী বলেন, পার্ক তৈরির কাজে এ পর্যন্ত উপজেলা পরিষদ থেকে ১৫-২০ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। পরে আর্ট হকার নামে এক প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী মো. পলাশ আহমেদকে প্রাইভেট পার্টনার হিসেবে নিয়ে অবশিষ্ট কাজ শেষ করে পার্ক উদ্বোধন করা হয়েছে। পলাশেরও প্রায় একই পরিমাণ টাকা খরচ হয়েছে। 

তিনি বলেন, পার্ক থেকে আয়ের ৭০ শতাংশ পলাশ এবং ৩০ শতাংশ উপজেলা পরিষদ পাবে। পরবর্তী সময়ে যদি আরও বিনিয়োগ করা লাগে, তা করবেন পলাশ।

সরকারি জায়গায় কোনও সরকারি কর্মকর্তার নামে পার্ক করার নিয়ম আছে কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে ইউএনও বলেন, ইউএনওর নামে পার্ক করতে আইনগত কোনও বাধা নেই। তবে এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কারও মতামত কিংবা সংশ্লিষ্টদের অনুমতি নেওয়া হয়নি। 

আরেক প্রশ্নের জবাবে প্রিয়াংকা দেবী বলেন, যেহেতু জায়গাটা রেলওয়ের, সেহেতু পার্ক করার অনুমতি চেয়ে রেলওয়ের কাছে আবেদন করা হয়েছে। তবে এখনও অনুমতি পাওয়া যায়নি। আশা করছি, দ্রুত সময়ের অনুমতি পাওয়া যাবে। 

এ ব্যাপারে রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের প্রধান ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, রেলওয়ের ওই জায়গায় পার্ক করার বিষয়টি আমার জানা নেই। পার্ক করার অনুমতি চেয়ে তারা কোনও আবেদন করেছে কি-না তাও জানি না। আবেদন করলে তো আমার জানার কথা। আর আবেদন করলেও মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাগবে।

তিনি আরও বলেন, অনুমতি না নিয়ে সরকারি জায়গায় এমন স্থাপনা নির্মাণ করা যায় না। তবে যথাযথ নীতিমালা অনুসরণ করে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করলে, যদি রেল মন্ত্রণালয় অনুমোদন দেয় তাহলে স্থাপনা নির্মাণ করা যায়। সেক্ষেত্রেও সীমাবদ্ধতা আছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজ-খবর নিয়ে রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হবে।

খন্দকার ফরহাদ আহমেদ বলেন, পার্কটির মূল জায়গা হলো ১ নম্বর সরকারি খাস খতিয়ান। এর সঙ্গে রেলওয়ের জায়গা সংযুক্ত করা হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওই জায়গায় জেলা পরিষদও বিনিয়োগ করেছে। এক্ষেত্রে আয়ের ৩০ শতাংশ উপজেলা পরিষদ এবং ব্যক্তি শেয়ার ৭০ শতাংশ পেতে পারে। 

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, ওই জায়গা সম্পর্কে জানা নেই। খোঁজ নিয়ে বলা যাবে।

তবে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইউএনও একটি প্রতিষ্ঠান। এটা যেহেতু কারও নাম নয়, তাই ওই নামে পার্ক করতে বাধা নেই।