থার্টি ফার্স্ট নাইট: কক্সবাজারে পর্যটক কম, নেই বিনোদনের ব্যবস্থা

নারী পর্যটক ধর্ষণ, অসাধু ব্যবসায়ীদের অপতৎপরতা ও নানা বিতর্কে কক্সবাজারের পর্যটনকে ঘিরে চলছে অস্থিরতা। এর ওপর এবার সৈকতে নেই কোনও ধরনের বিনোদনের ব্যবস্থা, তাই থার্টি ফার্স্ট নাইটকে কেন্দ্র করে আশানুরূপ পর্যটক আসেনি কক্সবাজারে। হোটেল-মোটেল মালিক সমিতি, বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি ও ট্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে পর্যটকদের জন্য নানা সুযোগ-সুবিধার কথা বলা হলেও এসবের বাস্তবায়ন চোখে পড়েনি। ফলে কক্সবাজারের পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টে রুম বুকিং হয়েছে মাত্র ৭০ শতাংশ। খালি পড়ে আছে বাকি ৩০ শতাংশ রুম।

জানা গেছে, প্রতি বছর থার্টি ফার্স্ট নাইটকে কেন্দ্র করে কক্সবাজারে লাখো পর্যটকের সমাগম ঘটে। পুরাতনকে বিদায় জানাতে ছুটে আসেন পর্যটকরা। ২০২২ সালকে বরণ করে নিতেও অনেক পর্যটক এসেছেন সৈকতের বেলাভূমিতে। তবে তা গত কয়েক বছরের তুলনায় কম। এর কারণ হিসেবে জানা গেছে, একদিকে করোনার বিধিনিষেধ, অন্যদিকে সম্প্রতি নারী পর্যটক ধর্ষণের ঘটনাটি সারা দেশের মানুষকে ব্যথিত করেছে। এ নিয়ে পর্যটকরা শঙ্কিত। তবে ভ্রমণে আসা পর্যটকদের নতুন বছরের প্রত্যাশা নিরাপদ ও সুন্দর কক্সবাজার।

কক্সবাজারে ঘুরতে আসা রাজধানী পুরান ঢাকার বাসিন্দা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী প্রেমা জানান, বাবা, মা ও বোনদের নিয়ে ভ্রমণে এসেছেন। তিনি চান না, কেউ কক্সবাজারে এসে বিপদে পড়ুক। এ জন্য কক্সবাজারকে আরও বেশি নিরাপদ ও সুন্দর করলে ভবিষ্যতে বিদেশি পর্যটকরাও ভ্রমণে আসবেন।

সৈকতে সূর্যাস্ত

ঢাকার মিরপুর থেকে আসা ব্যাংকার আব্দুল আউয়াল বলেন, ‘দেশি পর্যটক কক্সবাজার ভ্রমণে এলে কোনও লাভ নেই। কারণ দেশের টাকা দেশে খরচ করছেন পর্যটকরা। বিদেশিরা যখন আসবেন, তখন বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হবে।’

ঢাকার মোহাম্মদপুর থেকে আসা পর্যটক দম্পতি পারভেজ চৌধুরী ও রোমানা আক্তার বলেন, ‘প্রতি বছরের ন্যায় অনেক আশায় কক্সবাজার ভ্রমণে এসেছিলাম। উদ্দেশ্য ছিল থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন করবো। কিন্তু আশা পূর্ণতা পেলো না। সৈকতে কোনও ধরনের ওপেন কনসার্ট নেই। নেই বিনোদনের ব্যবস্থা। এতে করে থার্টি ফার্স্ট নাইটের কোনও আমেজ নেই কক্সবাজারে।’

চট্টগ্রামের হাটহাজারী থেকে আসা ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘কক্সবাজারে আসছিলাম, অনেক স্বপ্ন নিয়ে। কিন্তু থার্টি ফার্স্ট নাইটে বসে বসে বিচ দেখা ছাড়া এখানে তো কিছুই নেই। কী প্রয়োজন ছিল এত কষ্ট করে আসার?’

একই কথা বলেছেন মিনহাজুল করিম নামের এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, ‘পর্যটন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়াকড়ি আরোপ পর্যটন শিল্পের জন্য অশনি সংকেত। বিশ্বের সব দেশেই পর্যটন এলাকাগুলোতে বিশেষ দিনে বিশেষ বিনোদন ব্যবস্থা থাকে। কিন্তু আমাদের দেশে নানা অজুহাতে এসব দিনগুলোতে সব কিছু বন্ধ রাখে।’

কক্সবাজারের কলাতলী মেরিন ড্রাইভ হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খাঁন বলেন, ‘বর্ষবরণে কোনও ধরনের অনুষ্ঠান না করার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করায় অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর আশানুরূপ পর্যটক আসেনি। অনুষ্ঠান করার অনুমতি না দেওয়ায় পর্যটন শিল্পের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।’

coxbazar1

কক্সবাজার হোটেল-মোটেল ও রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আবুল কাসেম সিকদার বলেন, ‘কিছু দালালের কারণে গলাকাটা ব্যবসার বদনামটি হলো। আগে তাদের রুখতে হবে। আমরা ইতোমধ্যে এসব দালালদের তালিকা শুরু করছি।’

ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘শুধু থার্টি ফার্স্ট নাইট নয়, কক্সবাজারে বেড়াতে আসা পর্যটকদের নিরাপত্তায় সবসময় তৎপর ট্যুরিস্ট পুলিশ। তবে বিশেষ দিনগুলোতে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। খোলা হয়েছে পর্যটনের গুরুত্বপূর্ণ স্পটে হেল্প ডেস্ক।’

কক্সবাজারের জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ইংরেজি বর্ষবরণ উপলক্ষে সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি কাজ করছে জেলা পুলিশ। সাদা পোশাকেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তৎপর রয়েছেন। সৈকত ছাড়াও দরিয়া নগর, ইনানি, টেকনাফ, সেন্টমার্টিন ও ডুলাহাজারা সাফারি পার্কে আগত পর্যটকদের নিরাপত্তায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।’

র‌্যাব-১৫ কক্সবাজারের অধিনায়ক লে. কর্নেল খায়রুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘থার্টি ফার্স্ট নাইটকে কেন্দ্র করে সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে র‌্যাব-১৫ কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় কাজ করে যাচ্ছে। বেড়াতে আসা পর্যটকদের নিরাপত্তায় র‌্যাব সদস্যরা সব সময় প্রস্তুত। যেখানে আইনশৃঙ্খলার ব্যাঘাত ঘটবে সেখানে র‌্যাব পৌঁছে যাবে।’

জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, ‘থার্টি ফার্স্ট নাইট উপলক্ষে কক্সবাজারে আগত পর্যটকদের সুবিধা ও নিরাপত্তায় বৈঠক করেছে জেলা প্রশাসন। পর্যটন সেবার মানোন্নয়নের জন্য হোটেল, মোটেলে ভোটার পরিচয়পত্রসহ সাত দফা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।’