সাতক্ষীরায় ২২ মাসে তিন শতাধিক নারী-শিশু ধর্ষণের শিকার

করোনাকালীন সাতক্ষীরায় বাল্যবিয়ে মহামারি আকার ধারণ করেছে। সেই সঙ্গে উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে নারী ও শিশু ধর্ষণ ঘটনা। তবে এসব ঘটনার দ্রুত বিচার বাস্তবায়নে ও বাল্যবিয়ে ঠেকাতে কার্যকরী কোনও পদক্ষেপ নেই স্থানীয় প্রশাসনের।

যৌন নির্যাতন প্রতিরোধে স্থানীয় সরকার ও প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবিতে মঙ্গলবার (০১ মার্চ) বেলা সাড়ে ১১টায় সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়েছে। যৌথভাবে এই মানববন্ধনের আয়োজন করেছে বেসরকারি সংগঠন অগ্রগতি সংস্থা, আইন ও সালিশ কেন্দ্র। পরে প্রেসক্লাব অডিটোরিয়ামে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

২০২০ সালের মার্চ থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করোনাকালীন ২২ মাসে সাতক্ষীরায় নারী ও শিশু ধর্ষণের একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরেন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের শিশু অধিকার ইউনিটের প্রধান সমন্বয়কারী অম্বিকা রায়।

তিনি বেলেন, ‘জেলায় ২২ মাসে ৩০৯ জন নারী ও শিশু ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ২০২০ সালে মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১১৩ জন ও ২০২১ সালে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৯৬ জন। করোনাকালীন ধর্ষণের যেসব ঘটনা ঘটেছে, তা বিগত কয়েক বছরের তুলনায় অনেক বেশি। বয়স্ক নারীর থেকে কন্যাশিশুদের ধর্ষণের ঘটনাও বেশি ঘটেছে।’

যৌন নির্যাতন প্রতিরোধে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন

অম্বিকা রায় আরও বলেন, করোনাকালে সাতক্ষীরায় বাল্যবিয়ে মহামারি আকার ধারণ করেছে। বাল্যবিয়ের ফলে শিশুরা অনিচ্ছায় যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। যেসব মেয়েদের অপ্রাপ্তবয়সে বিয়ে দেওয়া হয়েছে তাদের বেশিরভাগ বিয়ের জন্য প্রস্তুত ছিল না। তাদের বিয়েতে বাধ্য করা হয়েছে। জেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এখন উপস্থিতির হার অনেকাংশে কমে গেছে। করোনাকালীন বাল্যবিয়ের হার বালিকা বিদ্যালয়গুলোতে ১২ দশমিক ৪০ শতাংশ, মাদ্রাসাগুলোতে ১৩ দশমিক ২৯ শতাংশ এবং যৌথ বিদ্যালয়গুলোতে ৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ। বাল্যবিয়ের হার আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় শিশুদের যৌন নির্যাতনসহ পারিবারিক নির্যাতনের হারও অনেকাংশে বেড়েছে।

তিনি বলেন, ভবিষ্যত প্রজন্মকে নিরাপদ পৃথিবী দিয়ে যাওয়ার জন্য বাল্যবিয়ে, নারী ও শিশু নির্যাতন বন্ধে রাষ্ট্র তথা স্থানীয় সরকার, প্রশাসনসহ সমাজের দায়িত্বশীল ব্যক্তিকে সক্রিয়ভাবে এগিয়ে আসার দাবি জানাচ্ছি। তবে শুধু প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণ করলেই এটি বন্ধ করা সম্ভব নয়; সামাজিকভাবে সচেতনতা বাড়াতে হবে।

শিশু যৌন নির্যাতন প্রতিরোধে স্থানীয় সরকার ও প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবিতে আয়োজিত মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী সুজন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান উজ্জল ও অগ্রগতি সংস্থার পরিচালক আব্দুস সবুর বিশ্বাস প্রমুখ।