২০০৬ সালে বাক ও শ্রবণ প্রতিবিন্ধী চম্পা খাতুনকে পারিবারিকভাবে বিয়ে করেন কৃষক কুদ্দুস ব্যাপারী। এরপর একে একে চারটি সন্তান আসে এই দম্পতির কোলজুড়ে। কিন্তু সবাই প্রতিবন্ধী। সবারই কানে শোনা ও কথা বলতে না পারার সমস্যা রয়েছে। প্রথম সন্তান জন্মের আড়াই বছর পর তারা বুঝতে পারেন শিশুটি প্রতিবন্ধী। পরের তিনটি সন্তানও প্রতিবন্ধী হয়।
মাদারীপুর জেলার রাজৈর উপজেলার ইশিবপুর ইউনিয়নের শাখারপাড় গ্রামে এই দম্পতির বসবাস। তাদের প্রথম সন্তানের নাম বৃষ্টি, দ্বিতীয় সন্তানের নাম শীলা, তৃতীয় সন্তান মুসা ও চতুর্থ সন্তান সাজেদা।
পাঁচ বছর আগে স্ত্রী ও প্রথম সন্তান প্রতিবন্ধী হিসেবে সমাজসেবা অধিদফতরে তালিকাভুক্ত হয়। সে সময় সমাজসেবা অধিদফতর থেকে প্রথম সন্তানের জন্য একটি ভ্যানগাড়ি দেওয়া হয়। এটাই এখন কুদ্দুসের আয়ের উৎস। পাশাপাশি তার নিজের ১২ কাঠা জমি আছে। আরও দুই বিঘা জমি বর্গা চাষ করেন কুদ্দুস। কিন্তু তা দিয়ে সন্তানদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারছেন না তিনি।
কুদ্দুস জানান, জন্মের পর থেকেই সন্তানগুলো প্রতিবন্ধী। তারা কেউই কথা বলতে বা শুনতে পারে না। স্ত্রী আর প্রথম সন্তান প্রতিবন্ধী হিসেবে সমাজসেবা অধিদফতরের কার্ড পেয়েছে। ফলে তারা দুই জন সরকারের ভাতাসহ অন্যান্য সহযোগিতা পাচ্ছে। কিন্তু অন্য তিন সন্তান এখনও প্রতিবন্ধী হিসেবে সমাজসেবা অধিদফতরে তালিকাভুক্ত নয়। স্থানীয়ভাবে গড়ে ওঠা একটি প্রতিবন্ধী কল্যাণ সংস্থায় মেজো সন্তানকে ভর্তি করানো হয়েছে। সেখানে তাকে হাতের কাজ শেখানো হচ্ছে। সরকারের কাছে সন্তানদের চিকিৎসাসহ বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা চান তিনি।
স্থানীয় প্রতিবন্ধী কল্যাণ সংস্থা ও বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সেলিম শরীফ বলেন, ‘আমার নিজের একটি সন্তান প্রতিবন্ধী। তার জন্য কিছু করার প্রচেষ্টা থেকে অনেক কিছু জানতে পারি। একপর্যায়ে এই জ্ঞান অন্যান্য প্রতিবন্ধীদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার চিন্তা থেকেই ২০১৮ সালে এ প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলি। শুরুতে ৪৩ জন প্রতিবন্ধী ছিল। এখন এখানে আছে ২১২ জন। এর মধ্যে সমাজসেবার কার্ডধারী রয়েছে ১৩২ জন। রাজৈর ইউনিয়নের প্রতিবন্ধীরা এখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে।’
তিনি জানান, তাদের প্রাথমিক জরিপ অনুযায়ী রাজৈর উপজেলার ইশিবপুর ইউনিয়নে ১৬৯ জন, বাজিতপুর ইউনিয়নে ৩০৭ জন, খালিয়া ইউনিয়নে ৩৭০ জন, কবিরাজপুর ইউনিয়নে ৫৭৩ জন এবং হরিদাশদী মহিন্দ্ররদী ইউনিয়নে ১৪১ জন প্রতিবন্ধী রয়েছে। মাদারীপুর জেলা প্রশাসন, সমাজসেবা অধিদফতরের উপপরিচালকসহ বিভিন্ন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেছেন। তাদের সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠানটি সরকারিভাবে একটি ভবন পাচ্ছে। এজন্য ২২ লাখ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। এ দিয়ে ভবনের পাশাপাশি প্রতিবন্ধীদের শিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ সংগ্রহ করা সহজ হবে।
প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষিকা খাদিজা আক্তার বলেন, এ প্রতিষ্ঠানে দৃষ্টিহীন বাদে সব ধরনের প্রতিবন্ধীকে ভর্তি করা হয়। এখানে মোমবাতি তৈরি, সেলাই প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন ধরনের ট্রেড চালু করা হয়েছে। প্রতিবন্ধীর প্রতিবন্ধকতার ধরন বুঝে তার জন্য উপযোগী প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এ প্রতিষ্ঠানে এক বছর থেকে ২৫ বছর বয়স পর্যন্ত প্রতিবন্ধীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এজন্য এখানে ২৬ জন স্টাফ স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করছেন।