সাত গ্রামের মানুষের একমাত্র যাতায়াতের ভরসা বাঁশের সাঁকো। এই সাঁকো দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কয়েক হাজার মানুষ ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। ঘটছে দুর্ঘটনা। কৃষিপণ্য বহন করতে না পেরে ভোগান্তিতে পড়েছেন কৃষকরা। ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকোটি রাজবাড়ীর দৌলতদিয়ায় পদ্মা নদীর শাখা ক্যানাল ঘাটের মাঝে অবস্থিত।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় ১০ বছর আগে দৌলতদিয়া ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের প্রয়াত ইউপি সদস্য পান্নু মোল্লা নিজ উদ্যোগে এলাকাবাসীদের সঙ্গে নিয়ে কয়েক লাখ টাকা ব্যয় করে বাঁশের এ সাঁকোটি তৈরি করেন। এই সাঁকো দিয়ে দৌলতদিয়া ইউনিয়নের ১নং বেপারিপাড়া, লালু মণ্ডলপাড়া, ইদ্রিসপাড়া, নাসির সরদারপাড়া, সাহাজদ্দিন বেপারিপাড়া, নতুনপাড়া ও দেবগ্রাম ইউনিয়নের মুন্সীবাজার এলাকাসহ সাতটি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করেন। এ ছাড়া স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, কৃষকসহ হাজার হাজার মানুষ চলাচল করেন।
সরেজমিন দেখা যায়, প্রায় ১৫০ ফুট দৈর্ঘ্যের সাঁকোটি জনসাধারণ চলাচলের সময় কাঁপতে থাকে। আবার অনেক স্থানে বাঁশ-খুঁটি পচে নষ্ট হয়ে গেছে। নড়বড়ে এই সাঁকো দিয়ে কৃষিপণ্য নিয়ে যাতায়াত করতে পারছেন না কৃষকরা। মাঠের ফসল নিয়ে যেতে না পারায় তাদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। সাঁকোটির অনেক স্থানে বাঁশ পচে যাওয়ায় স্কুলগামী ছাত্রছাত্রীদের অনেকেই পা আটকে আহত হয়েছে। সাঁকোটি দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৪ থেকে ৫ হাজার মানুষ যাতায়াত করেন।
এই সাঁকো দিয়ে চলাচল করা নাসির সরদারপাড়া গ্রামের মো. সেকেন শেখ (৫২) বলেন, ‘আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি খালের ওপর সেতু নির্মাণের। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিলেও বাস্তবে কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। নির্বাচন এলেই এলাকার জনপ্রতিনিধিরা সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন। নির্বাচন শেষ হয়ে গেলে তাদের আর দেখা যায় না।’
সাঁকোটি দিয়ে নিয়মিত পারাপার হওয়া দৌলতদিয়া মডেল হাইস্কুলের শিক্ষার্থী শিমুল, হাসান, কামরুল, সুমন, আকাশ, বৃষ্টি, সাথী আক্তার, শারমিন, ঝরনাসহ অনেকেই বলে, ‘বাঁশের সাঁকোটি নড়বড়ে হওয়ার কারণে দীর্ঘদিন ধরে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। অনেক সময়ই বাঁশের মধ্যে পা আটকে যায়। গত বছর বন্যার সময় সাঁকো থেকে পড়ে একটি শিশু মারা গিয়েছিল।’
এ বিষয়ে দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান মণ্ডল বলেন, ‘ক্যানাল ঘাট এলাকায় খালের মধ্যে সেতু না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে মানুষকে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সেখানে একটি সেতু করার জন্য আমরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছি। শুনেছি এলজিইডি থেকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর একটি প্রস্তাবনাও পাঠানো হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে কোনও অগ্রগতি দেখছি না। তবে মানুষের জরুরি চলাচল অব্যাহত রাখতে দ্রুতই সাঁকোটি মেরামত করে দেওয়া হবে।’
গোয়ালন্দ উপজেলা প্রকৌশলী বজলুর রহমান বলেন, ‘ছয় মাস আগে আমরা ক্যানাল ঘাটের ওই স্থানের সয়েল টেস্ট করে সেখানে ৯৬ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি সেতু নির্মাণের প্রস্তাব এলজিইডির প্রকল্প পরিচালক (পিডি) বরাবর পাঠিয়েছি। এতে প্রায় আট কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। তবে নদীভাঙন নিয়ে একটা শঙ্কা ছিল। কিন্তু মূল পদ্মা পাড় সংরক্ষণ প্রকল্প পাস হয়ে যাওয়ায় ভাঙনের শঙ্কা এখন নেই। আশা করছি, সেতুর প্রকল্পটি অনুমোদন পেয়ে যাবে।’