দাম বেশি পাওয়ায় ভুট্টা চাষে ঝুঁকছেন চাষিরা

ফরিদপুরের চরাঞ্চলে এবার ভুট্টার বাম্পার ফলন হয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে বাজারে দামও বেড়েছে তিন গুণ। ভালো দাম পাওয়ায় হাসি ফুটেছে ফরিদপুরের কৃষকদের মুখে।

জানা যায়, চরাঞ্চলে এ বছর রেকর্ড পরিমাণ জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছে। যে জমিগুলোতে বছরে একটি ফসল আবাদ করা হতো, সেই জমিতে উচ্চ ফলনশীল জাতের ভুট্টার আবাদ করছেন চাষিরা। স্বল্প খরচে অধিক লাভজনক হওয়ায় চরাঞ্চলে বাড়ছে এই ফসলের চাষ। আর চরাঞ্চলে চাষিদের উচ্চ ফলনশীল বীজ দিয়ে সহযোগিতা করেছে জার্মানভিত্তিক কোম্পানি বায়ার এজির বাংলাদেশ শাখা বায়ার ক্রপ সায়েন্স লিমিটেড।

ফরিদপুর সদর উপজেলার ডিক্রিরচর, নর্থ চ্যানেল এবং চরভদ্রাসন উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের চরাঞ্চলে এ বছর রেকর্ড পরিমাণ জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন হয়েছে বাম্পার। ভুট্টার বহুবিধ ব্যবহারের কারণে বাজারে ব্যাপক চাহিদা থাকায় গত কয়েক বছর ধরে চরাঞ্চলের চাষিরা এ ফসল চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭শ’ হেক্টর বেশি জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছে। বায়ার ক্রপ সাইন্সের উচ্চ ফলনশীল ডিকাল্ব ৯২১৭ ও ৯১৬৫ ভুট্টার চাষ করে অধিক ফলন পেয়েছেন চাষিরা।

ভুট্টা চাষি বাদশা মিয়া বলেন, ‘এ বছর উচ্চফলনশীল জাতের ডিকাল্ব ৯২১৭ ও ৯১৬৫ ভুট্টা চাষ করে ভালো ফলন পেয়েছি। গত বছর একমণ ভুট্টা ৫শ’ থেকে ৬শ’ টাকা বিক্রি করেছি। এ বছর বিক্রি করেছি ১৩শ’ থেকে ১৪শ’ টাকা মণ। ভুট্টা চাষে আমরা এবার অধিক লাভবান হয়েছি। আগামীতে আরও বেশি জমিতে চাষ করবো।’

আরেক চাষি আলী আশরাফ বলেন, ‘চরাঞ্চলে কোনও ফসল ভালো হয় না। আমরা বাদাম, ভুট্টা, কলাই চাষ করে থাকি। তবে এ বছর ফলন ভালো হওয়ায় সবাই ভুট্টা চাষের দিকেই ঝুঁকছেন। দামও ভালো পেয়েছি।’

উচ্চ ফলনশীল ডিকাল্ব ভুট্টার চাষ করে অধিক ফলন পেয়েছেন চাষিরাবায়ার ক্রপ সায়েন্সের আঞ্চলিক কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মানছুর রহমান বলেন, ‘ফরিদপুরের চরাঞ্চলসহ এই জোনে ভুট্টা চাষিদের মাঝে পাঁচ টন বীজ বিনামূল্য দেওয়া হয়েছে। বীজ দেওয়ার পাশাপাশি ক্ষেতের পরিচর্যাসহ সব ধরনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ফলে এ অঞ্চলের চাষিরা ভুট্টা চাষ করে অধিক লাভবান হয়েছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভুট্টাক্ষেতে সঠিক পরিচর্যা করতে পারলে ডিকাল্ব ৯২১৭-এর একরপ্রতি ফলন ১৪৫ থেকে ১৫০ মণ এবং ডিকাল্ব ৯১৬৫-এর একর প্রতি ফলন ১৫৫ থেকে ১৬০ মণ পাওয়া যাবে।’ 

ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ড. মো. হজরত আলী বলেন, ‘অন্যান্য ফসলের তুলনায় লাভজনক হওয়ায় ফরিদপুর অঞ্চলে ভুট্টার আবাদ বাড়ছে। এ বছর কৃষকরা উচ্চফলনশীল ডিকাল্ব ৯২১৭ ও ৯১৬৫ ভুট্টার চাষ করে অধিক ফলন পেয়েছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘চলতি মৌসুমে ফরিদপুর জেলায় প্রায় তিন হাজার হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছে।’