শেরপুরে দ্বিতীয় দফা বন্যায় ৫০ গ্রাম প্লাবিত

দ্বিতীয় দফায় বন্যায় শেরপুরের পঞ্চাশটি গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। মহারশি, সোমেশ্বরী, চেল্লাখালী ও ভোগাই নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে শেরপুর সদর, ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী ও নালিতাবাড়ীর ১৩টি ইউনিয়ন বন্যায় প্লাবিত হয়েছে।

বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে ঝিনাইগাতী সদর ইউনিয়নের ঝিনাইগাতী, রামেরকুড়া, খৈলকুড়া, বনকালি, চতল ও আহম্মদনগর; ধানশাইল ইউনিয়নের ধানশাইল, বাগেরভিটা, কান্দুলী, বিলাসপুর ও মাদারপুর এবং কাংশা ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর চরণতলা, আয়নাপুর, কাংশাসহ বহু গ্রাম। ওইসব গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।

পাহাড়ি ঢলের তোড়ে মহারশি নদীর বাঁধের বিভিন্ন অংশ ভেঙে গেছে। ঝিনাইগাতী-গোবিন্দগঞ্জ সড়কের ওপর দিয়ে প্রবল বেগে প্রবাহিত হচ্ছে ঢলের পানি। পানিতে তলিয়ে গেছে কাঁচা-পাকা বহু সড়ক, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ব্রিজ-কালভার্ট। ভেসে গেছে শত শত পুকুরের মাছ। সেই সঙ্গে তলিয়ে গেছে আমন বীজতলা ও সদ্য রোপিত আউশ ধানের ক্ষেত।

শনিবার (১৮ জুন) সকালে ঝিনাইগাতীতে বন্যার পানিতে ডুবে নিখোঁজ দুই জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তারা হলেন– ঝিনাইগাতী উপজেলার সদর ইউনিয়নের বৈরাগীপাড়া গ্রামের মৃত নফজ উদ্দিনের ছেলে কৃষক আশরাফ আলী (৬০) এবং ধানশাইল ইউনিয়নের বাগেরভিটা গ্রামের শেখ কাদের আলীর ছেলে রাজমিস্ত্রি আবুল কালাম (৩৩)।

এদিকে শুক্রবার সন্ধ্যায় নালিতাবাড়ী উপজেলার নন্নী উত্তরবন্দ গ্রামে বন্যায় পানিবন্দি ঘরে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে শিপন (১৪) নামে সপ্তম শ্রেণির এক মাদ্রাসা ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। অপরদিকে ঝিনাইগাতীতে বন্যার পানিতে আটকে পড়া ছয়টি পরিবারের ২৬ জন সদস্যকে উদ্ধার করা হয়েছে।

ঝিনাইগাতী সদর ইউপি চেয়ারম্যান মো. শাহাদৎ হোসেন জানান, তার ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ডের রামেরকুড়া এলাকায় মহারশি নদীর বাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করে। হঠাৎ পাহাড়ি ঢলের পানি প্রবেশ করায় ছয়টি পরিবার বাড়ি থেকে বের হতে পারেনি। ওই পরিবারগুলোতে বৃদ্ধ, অন্তঃসত্ত্বা নারী, শিশুসহ ২৬ জন সদস্য ছিলেন। দিনভর পানিতে আটকে থাকায় এবং পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় পরিবারগুলো ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারুক আল মাসুদ ঘটনাস্থলে আসেন এবং তার নেতৃত্বে শুক্রবার বিকাল ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের কর্মী, জনপ্রতিনিধি, স্কাউট সদস্য ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকরা ওই পরিবারের সদস্যদের উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দেন।

ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারুক আল মাসুদ বলেন, ‘বন্যার পানিতে কিছু পরিবার আটকে পড়ে। পরে তাদের উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৬০ টন চাল, ৩ লাখ টাকা এবং দেড় হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বন্যার্তদের মাঝে বিতরণের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে বিতরণ শুরু হয়েছে।’

জেলা প্রশাসক সাহেলা আক্তার বলেন, ‘বন্যা পরিস্থিতিতে দফতর প্রধানদের সার্বক্ষণিক কর্মস্থলে থাকতে বলা হয়েছে। উপজেলাগুলোতে জিআর চাল, নগদ অর্থ, শুকনো খাবার বরাদ্দ দিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বিতরণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’