ট্রাকভাড়া বাড়ায় বেনাপোল বন্দরের পণ্য বহনে সংকট

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় বেনাপোল বন্দরে পণ্য বহনে ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানের ভাড়া হঠাৎ অস্বাভাবিক বেড়েছে। এ কারণে সংকটে পড়েছেন ভারত থেকে আমদানি করা পণ্য দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছাতে আমদানিকারক, পরিবহন এজেন্ট ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা। এ অবস্থায় বেনাপোল স্থলবন্দর থেকে পণ্য পরিবহনে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

আমদানিকারকরা জানান, তেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে পরিবহন মালিকরা ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন। এ কারণে পণ্য পরিবহনে ব্যবসায়ীরা চরম বিপাকে পড়েছেন। আগে বেনাপোল থেকে ঢাকা পর্যন্ত পণ্যবাহী ট্রাকের ভাড়া ছিল ১৮ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ২২ হাজার টাকা। এখন সেই ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ২৮ থেকে ৩০ হাজার টাকা। বর্তমানে ট্রাক সংকটে অনেকে আমদানি পণ্যের শুল্ক পরিশোধ করেও বন্দর থেকে পণ্য খালাস করতে পারছেন না।

ঢাকার দিলকুশা এলাকার আমদানিকারক অনিমেষ মুখার্জি জানান, তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পাওয়ার প্রজেক্টের মালামাল ভারত থেকে আসে। তার কয়েকটি পণ্যের চালান গত সপ্তাহে বেনাপোল বন্দরে এসেছে। কাস্টমসসহ বন্দরের সব কার্যক্রম শেষ। গতকাল বিকালে ট্রাক ভাড়া করতে গেলে ভাড়া এক লাফে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা বেশি চাওয়া হয়। অতিরিক্ত ট্রাক ভাড়ার কারণে তিনি পণ্য বেনাপোল বন্দর থেকে ফ্যাক্টরিতে নিতে পারছেন না।

একই কথা জানালেন খুলনার আমদানিকারক হামিদ এন্টারপ্রাইজের মালিক আব্দুল হামিদ। তিনি বলেন, ‘অতিরিক্ত ট্রাকভাড়ায় আমদানি করা কাঁচামাল নিলে লাভ তো দূরে থাক, আসলও উঠবে না।’

যশোরের আমদানিকারক সোহেল রানা বলেন, ‘গত মাসেও আমরা বেনাপোল থেকে যশোর পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৭ হাজার টাকায় ট্রাকে করে পণ্য এনেছি। কিন্তু গতকাল থেকে সেই ট্রাক ভাড়া চাওয়া হচ্ছে ১২ হাজার টাকা। এতে লোকসানের শিকার হতে হবে। কেননা প্রতিযোগিতার বাজারে পণ্যের দাম বাড়ানো যায় না।’

ভাড়া বাড়ানো প্রসঙ্গে বেনাপোল ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিক সমিতির সভাপতি আতিকুজ্জামান সনি বলেন, ‘তেলের দাম বাড়লে তো ট্রাক ভাড়া বাড়বে। সেটি গত শনিবার থেকেই নেওয়া হচ্ছে। বর্তমান বাড়তি তেলে কমপক্ষে একটি ট্রাকে ১০ হাজার টাকার তেল বেশি লাগবে। সে কারণে বেনাপোল বন্দর থেকে সারা দেশে পণ্য পরিবহনের ভাড়া বেড়েছে।’

বেনাপোল আমদানি-রফতানি কারক সমিতির সভাপতি মহসিন মিলন বলেন, ‘আগে বেনাপোল থেকে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে পণ্য পরিবহনে প্রতি ট্রাকের ভাড়া ছিল সর্বনিম্ন ১৮ হাজার এবং সর্বোচ্চ ২৩ হাজার টাকা। একই ট্রাকের ভাড়া এখন বেড়ে হয়েছে ২৮ থেকে ৩২ হাজার টাকা। একইভাবে কাভার্ডভ্যানের ভাড়া ২৫ হাজার থেকে বেড়ে হয়েছে ৩৫ হাজার টাকা। এত বেশি ভাড়া দেওয়ার পরেও ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান মিলছে না। ফলে পণ্য পরিবহন কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।’

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান বলেন, ‘পরিবহন সংকটের জন্য ট্রাক ভাড়া এখন স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে। কাঁচাপণ্য নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে পণ্য খালাস করে নিয়ে যাচ্ছেন অনেক ব্যবসায়ী।’

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক নাসির উদ্দিন বলেন, ‘বেনাপোল দিয়ে প্রতিদিন স্বাভাবিক সময়ে সাড়ে ৩শ’ ট্রাক পণ্য আমদানি ও আড়াইশ’ ট্রাক পণ্য রফতানি হয়ে থাকে। গেল ২০২১-২২ অর্থবছরে পণ্য আমদানি হয়েছে ২১ লাখ ১৪ হাজার মেট্রিক টন। এসব পণ্য ট্রাক বা কার্ভাডভ্যানে বহন করা হয়। তেলের দাম বাড়ায় বেনাপোল থেকে পণ্য বহনে ট্রাক ভাড়া ১২ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা বেড়েছে। এতে সমস্যায় পড়বেন ব্যবসায়ীরা।’

যশোর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান খান বলেন, ‘জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে ট্রাকের ভাড়াও বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে শিল্পের উপর চাপ পড়বে। খরচ বেড়ে যাবে। যা ভোক্তাদের ওপর গিয়ে পড়বে।’