‘মুরগি-ডিমের বাড়তি দাম বেশিদিন স্থায়ী হবে না’

চট্টগ্রামে অন্যান্য নিত্যপণ্যের সঙ্গে বেড়েছে ডিম ও ব্রয়লার মুরগির দাম। প্রতি ডজন মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকায়। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২১০ টাকা থেকে ২২০ টাকায়। বাড়তি দামে ডিম ও ফার্মের মুরগি কিনতে গিয়ে সাধারণ ক্রেতাদের নাভিশ্বাস উঠেছে। তবে খামারিরা বলছেন, মুরগির খাদ্য, ওষুধ, বাচ্চা, পরিবহন ভাড়াসহ অন্যান্য ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় ডিম ও মুরগির দাম বেড়েছে।

চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. দেলোয়ার হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চট্টগ্রামে পাঁচ হাজার ব্রয়লার (মাংসের মুরগি) এবং ৬শ’ লেয়ারের (ডিমপাড়া মুরগি) খামার রয়েছে। খাবার, বাচ্চা, ওষুধের দাম বেড়ে যাওয়ায় ডিম ও মুরগির দাম বেড়েছে। গত কয়েক মাসে লোকসানের কারণে অনেকগুলো লেয়ার ও ব্রয়লার মুরগির খামার বন্ধ হয়ে গেছে। এ কারণে বাজারে মুরগি ও ডিমের দাম বেড়েছে। তবে এ দাম বেশিদিন স্থায়ী হবে না। দাম বাড়ার কারণে যেসব খামার সাময়িক বন্ধ রয়েছে সেগুলো পুনরায় চালু হবে।’

রাউজান পৌরসভার ওয়াহেদের খিল এলাকার সানোয়ারা অ্যাগ্রো ফার্মের মালিক জুয়েল চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ব্রয়লার মুরগির খাদ্য প্রতি ৫০ কেজি (নারিশ) ২ হাজার ৮৩৮ টাকা। একটি লেয়ার মুরগি দৈনিক ১২০ গ্রাম খাদ্য খায়। তার ওপর ওষুধ, শ্রমিক, বিদ্যুৎ বিলসহ অন্যান্য খরচ রয়েছে। প্রতিটি মুরগির বাচ্চা বুধবার ছিল ২৪-২৫ টাকা। তা বৃহস্পতিবার ৩১ টাকা, শুক্রবার ৩৬ টাকা এবং শনিবার ৪০ টাকায় বিক্রি হয়। সব মিলিয়ে এখন প্রতিটি ডিম ৯ টাকা করে বিক্রি করলেও লোকসান হয়।’

কেন ডিমের দাম বাড়ছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে এ খামারি বলেন, ‘গত রমজানে প্রতিটি ডিম বিক্রি হয় ৭ টাকায়। তার ওপর শীতকালে বিভিন্ন রোগে বহু ডিমের মুরগি মারা যায়। লোকসানের কারণে অনেক খামার বন্ধ হয়ে গেছে। এক সময় অন্যান্য জেলা থেকে চট্টগ্রামে ডিম আসতো। এখন সব জেলায় খামার কমে গেছে। এজন্য ডিম কম উৎপাদিত হওয়ায় সেসব জেলার প্রয়োজন মিঠছে না। এ কারণে চট্টগ্রামে অন্যান্য জেলা থেকে ডিম আসছে না। এ সংকট নিরসন সময়সাপেক্ষ বলে মনে হচ্ছে।’

রাঙ্গুনিয়া উপজেলার বেতাগী ইউনিয়নে অবস্থিত হাজী আজিজুল হক অ্যাগ্রোর মালিক জি এম তারেক বলেন, ‘লেয়ার মুরগির খাদ্য গত তিন মাস আগে প্রতি বস্তা এক হাজার ৯৭০ টাকায় কিনতাম। এখন একই খাদ্য কিনতে হচ্ছে দুই হাজার ৬৯০ টাকা করে। মাঝখানে গত বেশ ক’মাস মুরগির দাম কম ছিল। সে সময় আমাদের ব্যাপক লোকসান দিতে হয়।  পাইকারিতে শনিবার প্রতিটি ডিম ১১ টাকা ৭০ পয়সায় বিক্রি করেছি। রবিবার প্রতিটি ডিম ১২ টাকা ৫০ পয়সায় বিক্রি করেছি।’

ডিমের দাম বাড়া প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম নগরীর মুরাদপুর হামজারবাগ এলাকার বাসিন্দা ইউসুফ তালুকদার বলেন, ‘এক সপ্তাহ আগেও যেখানে প্রতিটি ডিম ১০ টাকা কিংবা ৯ টাকা ৫০ পয়সা করে কিনেছি। বর্তমানে প্রতিটি ডিম ১৩ টাকা করে কিনতে হচ্ছে। প্রতি ডজন ডিম ১৫৫ টাকা থেকে ১৬০ টাকায় দোকানে বিক্রি হচ্ছে। আগে গরিবের পুষ্টিকর খাদ্য হিসেবে পরিচিত ছিল ডিম। এখন তাও হাতের নাগালের বাইরে চলে গেছে।’

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক আনিসুর রহমান বলেন, ‘বাজারে ডিম ও মুরগির মাংসের দাম বেড়েছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে তদারকি করছি। শুক্রবার অভিযান চালিয়ে কয়েকজনকে জরিমানা করেছি। সামনেও এ বিষয়ে আমরা অভিযান চালাবো।’