নারায়ণগঞ্জে পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষে একজন নিহত

নারায়ণগঞ্জ শহরের ২নং রেলগেট এলাকায় বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় একজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন পুলিশসহ বিএনপির অনেক নেতাকর্মী। বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টার দিকে এ সংঘর্ষ শুরু হয়। এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকালে বিএনপির নেতাকর্মীরা প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানের মিছিল নিয়ে বের হলে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের সময় বিএনপির নেতাকর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পুলিশ রাবার বুলেট, টিয়ারশেল ও গুলি ছোড়ে।

জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম রবি বলেন, ‘আমিসহ দলের প্রায় পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। পুলিশ গুলি ছুড়েছে। আমি নিজেও গুলিবিদ্ধ হয়েছি। এই সংঘর্ষে যুবদলের শাওন নিহত হয়েছে। এ ছাড়াও আরও একজন মারা যাওয়ার খবর পেয়েছি, তবে তার নাম পাইনি। আরও অনেক নেতাকর্মী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কর্মসূচি পালন করতে শহরের চুনকা পাঠাগার থেকে আমরা মিছিল নিয়ে বের হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। এ সময় পুলিশ এসে বাধা দেয়। পরে সেখান থেকে চলে আসার সময়ে শহরের ২নং রেল গেটের কাছে এলে পুলিশ ফের বাধা দেয় ও লাঠিচার্জ করে। পরে তারা আমাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়েছে এবং টিয়ারশেল নিক্ষেপ করেছে।’

জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অধ্যাপক মামুন মাহমুদ বলেন, ‘সংঘর্ষের ঘটনায় প্রায় দুই শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে শতাধিক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। যুবদল নেতা মো. শাওন নিহত হয়েছেন। শাওনের বাড়ি ফতুল্লার এনায়েতনগরে। এ ছাড়াও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম রবি গুলিবিদ্ধ, সিনিয়র নেতা সুজন মাহমুদ গুলিবিদ্ধ, সোনারগাঁয়ের সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান আহত হয়েছেন। এখনও অনেক খবর আসছে।’

জেলা যুবদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনি দাবি করেন, ‘নিহত শাওন সদর উপজেলার এনায়েতনগর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড যুবদলের একজন সক্রিয় কর্মী। এখনও যুবদলের কমিটি হয়নি, কমিটি হলে ভালো পদ পাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা ছিল। সে আমাদের সঙ্গে দীর্ঘদিন রাজনীতি করে আসছে। শাওন ৩নং ওয়ার্ডের নবীনগর এলাকার বাসিন্দা। সংঘর্ষের ঘটনায় তার মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়াও প্রায় দুই শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।’

তিনি আরও দাবি করেন, ‘সকালে ২নং রেল গেট এলাকায় মিছিল নিয়ে বের হওয়ার সময় পুলিশের গুলিতে শাওন আহত হন। তার বুকে গুলি লেগেছে। পরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এখন আরেক কর্মীকে নিয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এসেছি।’

নারায়ণগঞ্জ জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. এস কে ফরহাদ বলেন, ‘সকাল সাড়ে ১১টার দিকে শাওনকে হাসপাতালে আনা হলে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তবে গুলিবিদ্ধ কি-না তা নিশ্চিত নই। এখন লাশ মর্গে রয়েছে।’

নারায়ণগঞ্জ সদর থানার ওসি আনিচুর রহমান মোল্লা বলেন, ‘সংঘর্ষে পুলিশের অনেকে আহত হয়েছেন। আহতের সংখ্যা এই মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়। আমরা ফিল্ডে আছি, তবে পরিস্থিতি এখন আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে। পরে বিস্তারিত বলতে পারবো।’

নারায়ণগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আমীর খসরু বলেন, ‘এই সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের ১৫-২০ জন আহত হয়েছেন। তবে বিএনপির কতজন আহত বা নিহত হয়েছে তা নিশ্চিত না। একজন নিহত হয়েছে বলে শুনেছি, তদন্ত করে বলতে পারবো।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপির নেতাকর্মীরা সড়ক দখল করে সমবেশ করার চেষ্টা করে। এ সময়ে পুলিশ তাদের সেখান থেকে সরে যাওয়ার অনুরোধ করে। তারা অনুরোধ প্রত্যাখান করে পুলিশের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। ফলে পুলিশ বাধ্য হয়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ করে ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এ ঘটনায় কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। এ বিষয়ে পরে বিস্তারিত বলতে পারবো।’

উল্লেখ্য, ১ সেপ্টেম্বর ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শোভাযাত্রা বের করে বিএনপি। এতে পুলিশ বাধা দেয়। এ নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।