পিরোজপুরের কঁচা নদীর ওপর নির্মিত বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব অষ্টম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু উদ্বোধন হওয়ায় পিরোজপুরের মানুষের মনে বইছে আনন্দের জোয়ার। অনেক ভোগান্তির অবসান হওয়ায় উচ্ছ্বসিত তারা। সেতুটি হওয়ায় চিকিৎসা, শিক্ষা ও ব্যবসা-বাণিজ্যসহ নানা ক্ষেত্রে উপকৃত হবেন এই এলাকার মানুষ।
রবিবার ৪ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেতুটির উদ্বোধন করেন। সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে পিরোজপুর সদর উপজেলার কুমিরমারা প্রান্তে এবং কাউখালী উপজেলার বেকুটিয়া প্রান্তে দুটি সুবিশাল প্যান্ডেল তৈরি করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সড়ক ধারে টাঙানো হয় ব্যানার ও ফেস্টুন।
পিরোজপুর প্রান্তে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম। তিনি অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, ‘বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব অষ্টম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু উদ্বোধন হওয়ায় আনন্দের দুয়ার খুলে গেলো।’
কাউখালীর বাসিন্দা সাংবাদিক রবিউল হাসান রবিন বলেন, ‘কঁচানদীর উপর নির্মিত বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব অষ্টম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু উদ্বোধন হওয়ায় আগে পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার সঙ্গে পিরোজপুর জেলা সদরের যোগাযোগের মাধ্যম ছিল ফেরি, ট্রলার বা নৌকা। মানুষ শুধু কোর্ট-কাচারির জন্য জেলা সদরে যেত। আর চিকিৎসা ও বিভিন্ন উৎসবে কেনাকাটার জন্য মানুষ বরিশালে যেত। সেতু উদ্বোধন হওয়ায় আমাদের মনে আনন্দের জোয়ার। মানুষ এখন সব কাজে পিরোজপুরে যাবে বলে আমার বিশ্বাস।’
পিরোজপুর জেলা ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা নকীব বলেন, ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব অষ্টম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু উদ্বোধন হওয়ায় সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। কাউখালী, রাজাপুরসহ নিকটবর্তী এলাকার মানুষ আগে খুলনা, বাগেরহাট থেকে সবজিসহ বিভিন্ন পণ্য কিনে বেকুটিয়া ফেরি পার হয়ে নিজ নিজ এলাকায় যেত। সেতু হওয়ার কারণে তারা পণ্য কিনে এখন অল্প সময়ে ঝামেলাহীনভাবে এলাকায় ফিরতে পারবে তারা।’
কাউখালী উপজেলার ব্যবসায়ী জসিম হাওলাদার ও গনেশদাস বলেন, ‘খুলনা থেকে পণ্য এনে পিরোজপুর হয়ে ফেরিতে করে কাউখালীতে নিয়ে যেতাম। অনেক সময় নদীতে পড়ে পণ্য নষ্ট হয়ে গেছে। ফেরি অনেক বিকল থাকতো। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব অষ্টম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু উদ্বোধন হওয়ায় আমরা খুশি। আমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি। দীর্ঘায়ু কামনা করছি তার।’
জানা গেছে, ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সেতুটির নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন। ৯৯৮ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ১৩ দশমিক ৪০ মিটার প্রস্থের সেতুটিতে ১০টি পিয়ার ও ৯টি স্প্যান রয়েছে। ৮৮৯ কোটি টাকা ব্যয়ে চীনের চায়না রেলওয়ে ১৭ ব্যুরো গ্রুপ লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান সেতুটি নির্মাণ করেছে। এর মধ্যে ৬৫৪ কোটি ৭৯ লাখ টাকা চীন সরকার এবং বাকি অর্থ বাংলাদেশ সরকার দিয়েছে। গত ৭ আগস্ট ঢাকায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠকে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই সেতুর হস্তান্তর সনদ চুক্তিতে সই করেন।