নিষেধাজ্ঞা শেষে রাতে নদীতে নেমেছেন জেলেরা

দীর্ঘ ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে শুক্রবার মধ্যরাত (২৯ অক্টোবর)  থেকে পদ্মা নদীতে নেমেছেন জেলেরা। নিষেধাজ্ঞা চলাকালে রাজবাড়ীর পদ্মা নদীতে সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ ছিল। ২৮ অক্টোবর রাত ১২টার পর থেকে সরকার ঘোষিত নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে। 

সংশ্লিষ্টরা জানান, আশ্বিন মাসের অমাবস্যা ও ভরা পূর্ণিমায় মা ইলিশ প্রচুর ডিম ছাড়ে। ইলিশের ডিমের পরিপক্কতা ও প্রাপ্যতার ভিত্তিতে এবং আগের গবেষণার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এ বছর মা ইলিশ রক্ষা কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়। 

এদিকে এ বছর নদীতে সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকায় অধিকাংশ জেলে মাছ ধরা থেকে বিরত থাকলেও কিছু অসাধু জেলে নদীতে নেমেছেন। তবে চলতি বছর মা ইলিশ রক্ষা অভিযান সফল হয়েছে বলে মনে করছেন মৎস্য বিভাগ। ভবিষ্যতে ইলিশের উৎপাদন আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশাবাদী সংশ্লিষ্টরা।

আরও পড়ুন: নিষেধাজ্ঞার ‍সুফলে এখন ইলিশ আসছে ব্রহ্মপুত্রে

গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের জেলে হারুন, কাদের, কোবাদসহ বেশ কয়েকজন জেলে জানান, তারা সরকারের নিষেধাজ্ঞা সব সময় পালন করেন। মূলত তারা বড় নৌকায় গুল্টিজাল দিয়ে মাছ ধরেন। নিষেধাজ্ঞার সময় নদী থেকে জাল ও নৌকা তুলে মেরামতে ব্যস্ত সময় পার করেছেন। তবে এই সময় পরিবার নিয়ে কষ্টে দিন কেটেছে বলে জানান জেলেরা। তারা বলেন কেবল সরকারি চাল দিয়েতো পেট ভরে না। আরও অনেক কিছু লাগে। এ কারণেই অনেকে নিেষেধাজ্ঞার মধ্যেও নদীতে নেমেছেন। 

উপজেলা মৎস্য অফিস ও দৌলতদিয়া নৌ-পুলিশ ফাঁড়ি সূত্রে জানা যায়, ২২ দিনের মা ইলিশ শিকারের নিষেধাজ্ঞায় ১০টি মোবাইল কোর্টে ২৮ জন জেলের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছে। এছাড়াও মাছ ধরার ১২টি নৌকা, কারেন্ট জাল ৪০ লাখ মিটার, ইলিশ মাছ ১৯৫ কেজি জব্দ করে উপজেলার কয়েকটি এতিমখানায় বিতরণ করা হয়। ১৯ জেলেকে ২৭ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। 

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শাহারিয়ার জামান সাবু বলেন, সবার আগে জেলেদের খাদ্য সহায়তা শতভাগ নিশ্চিত করা হয়েছে। গোয়ালন্দে নিবন্ধিত ১৬২৭ জেলেকে ২৫ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে। এ বছর মৎস্য বিভাগ থেকে মা ইলিশ রক্ষায় আপ্রাণ চেষ্টা করা হয়েছে। যার সফলতা দেশবাসী পাবে। 

এদিকে চাঁদপুরের জেলেরাও নিষেধাজ্ঞা শেষে রাতেই নদীতে নেমেছেন। ভোরে মাছ নিয়ে তারা ঘাটে ফিরতে পারবেন বলেও আশা প্রকাশ করেছেন। 

স্থানীয় জেলে ইদ্রিস বলেন, আমরা সরকারের নিষেধাজ্ঞা মেনে চললেও ২২ দিন পরিবার নিয়ে কষ্টে কেটেছে। কারণ বরাদ্দের চাল দিয়ে শুধু সংসার চলে না। এরজন্য অনেক জেলে নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও বেপরোয়া হয়ে নদীতে নেমেছেন। 

মৎস্যজীবীরা জানান, এ বছর চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা নদীর ৭০ কিলোমিটার এলাকার বিভিন্ন স্থানে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মা ইলিশ শিকার করেছেন অনেক জেলে।

আরও পড়ুন: ইলিশ কি ক্যালেন্ডার দেখে ডিম পাড়ে?

চার জেলা নিয়ে গঠিত চাঁদপুর অঞ্চলের নৌ-পুলিশ সুপার মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, বিগত বছরের তুলনায় এ বছর নদীতে বেশি মাছ থাকায় অসাধু জেলেরা ছিল বেপরোয়া। নৌ-পুলিশের কঠোর তৎপরতার কারণে অধিকাংশ জেলে মাছ ধরা থেকে বিরত ছিল। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মাছ শিকারের অপরাধে চাঁদপুর অঞ্চলে মোট ১১৮৮ জন জেলেকে আটক করা হয়েছে। 

চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা গোলাম মেহেদী হাসান বলেন, জেলা প্রশাসন, নৌপুলিশ, কোস্টগার্ডসহ বিভিন্ন দফতরের সমন্বয়ে গঠিত টাস্কফোর্স সদস্যরা মা ইলিশ রক্ষায় তৎপর ছিল। আমরা সবাই মিলে কাজ করেছি। এ বছর নদীতে প্রচুর মা ইলিশ ডিম ছেড়েছে। সামনের জাটকা রক্ষা কার্যক্রম সফলভাবে বাস্তবায়ন হলে ইলিশের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।