যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধাকে লাঞ্ছনার ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি দাবি

যশোরের কেশবপুরে যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী রফিকুল ইসলামকে লাঞ্ছিত করা এবং জীবননাশের হুমকিসহ মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কটূক্তির প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। রবিবার দুপুরে কেশবপুর উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ব্যানারে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়,  গত ১ ডিসেম্বর দুপুর পৌনে ২টার দিকে স্বাধীনতাবিরোধী পরিবারের সন্তান, সন্ত্রাসী আলমগীর সিদ্দিকী টিটু ২০-২৫ জনকে নিয়ে রফিকুল ইসলামের ওপর অতর্কিতে হামলে পড়ে। তারা যুদ্ধাহত এই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে অক্রমণ করে; বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বাপ-মা তুলে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং হত্যার হুমকি দেয়। সে সময় তার চিৎকারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এমএম আরাফাত হোসেন ঘটনাস্থলে এসে সন্ত্রাসীদের উপজেলা চত্বর থেকে বের করে দেন।

সংবাদ সম্মেলনে যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনার দিন আমি কেশবপুর থানায় উপস্থিত হয়ে সন্ত্রাসী আলমগীর সিদ্দিকী টিটু, জামাল, মাসুদ, মাহবুবসহ কয়েক জনের নাম উল্লেখ করে একটি সাধারণ ডায়েরি করি। যার নম্বর-৩৬/০১.১২.২০২২।’

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, কেশবপুর-৬ আসনে বিগত উপনির্বাচনের পর থেকে একটি মহলের সরাসরি আশীর্বাদে সন্ত্রাসী টিটুসহ ৩০-৩৫ ব্যক্তি প্রকৃত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কটূক্তি, অপমান ও লাঞ্ছনা করে আসছে। টিটুর বিত্ত-বৈভব আলাদিনের চেরাগ পাওয়ার মতো। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা বিভিন্ন স্থানে নিয়োগ বাণিজ্যের মূল হোতা এই টিটু ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা।

মুক্তিযোদ্ধারা দাবি করেন, গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে তদন্ত করালে তাদের এই অর্থ-বাণিজ্য ও দৌরাত্ম্য দিবালোকের মতো পরিষ্কার হয়ে যাবে।

এক প্রশ্নের জবাবে মুক্তিযোদ্ধারা বলেন, ‘টিটুর মা জামায়াতের রুকন; তার মামা কেশবপুর পৌরসভার মেয়র রফিকুল ইসলাম মোড়ল। মূলত তারাই এই টিটুর পেছনে কলকাঠি নাড়ে।’

মুক্তিযোদ্ধাদের দাবি, বিগত উপনির্বাচনে বাইরের একজন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই আওয়ামী লীগের প্রকৃত নেতাকর্মীদের অপমান অপদস্থ করা হচ্ছে। ইউনিয়ন বা ওয়ার্ড পর্যায়ে কমিটি গঠনের সময় মুক্তিযোদ্ধা বা তাদের পরিবারের সন্তানদের অবহেলা, কমিটিতে না রাখার প্রবণতা রয়েছে।

মুক্তিযোদ্ধা নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আটক ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।

এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে টিটুর মামা কেশবপুর পৌরসভার মেয়র রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সম্প্রতি কেশবপুরের সাগরদাঁড়ী ইউনিয়নের ওয়ার্ড সম্মেলন হয়েছে। সেখানে উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী রফিকুল ইসলাম তার বক্তৃতায় টিটুর বাবা-মাকে উদ্দেশ করে নানা কটু কথা বলেন। টিটু উপজেলা চত্বরে গিয়ে তার মা-বাবাকে নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যানের এ ধরনের বক্তব্য দেওয়ার হেতু জানতে চাইলে তিনি (কাজী রফিকুল ইসলাম) পায়ের জুতা খুলে তাকে মারতে যান। সেই সময় টিটুও তাকে বলে, তিনি ও তার ছেলে মুক্ত নৌকার বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে নির্বাচন(সাগরদাঁড়ী ইউপি) করেছেন। তার এক ছেলে শ্রাবণ (কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ) জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি; তিনি কেন টিটু ও তার পরিবারের নিয়ে উচ্চবাচ্য করেন।’

এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র রফিকুল বলেন, ‘আলমগীর সিদ্দিকী টিটু পৌর আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ও উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য।’

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত থেকে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন বীর মুক্তিযোদ্ধা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মুডহারুল ইসলাম মন্টু, অ্যাডভোকেট রবিউল আলম, গোলাম মোস্তফা, গোলাম রসুল, ইজাহার আলী খোকন, শেখ আব্দুর রাজ্জাক, আব্দুল খালেক, সাবেক উপজেলা কমান্ডার মোহাম্মদ আলী, নূরুল ইসলাম খোকন প্রমুখ।