‘দেশের প্রতি ভালোবাসার টানেই পতাকা বিক্রি করি’

দরজায় কড়া নাড়ছে মহান বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালে দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়ে বিশ্ব-মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের। ৩০ লাখ শহীদের আত্মদানে পরাধীনতা থেকে মুক্ত হয়ে আমরা পাই লাল-সবুজের পতাকা। বিজয় দিবস আসলে তাই বেড়ে যায় পতাকার বেচাবিক্রি। বিজয় দিবসকে ঘিরে এখন কুষ্টিয়ার বিভিন্ন স্থানে দেখা মিলছে মৌসুমি পতাকা বিক্রেতার।

কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা চত্বরে কথা হয় মৌসুমি পতাকা বিক্রেতা পল্টু মণ্ডলের (৫৩) সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘প্রায় ২০ বছর ধরে পতাকা বিক্রি করি। প্রতি বছরের ডিসেম্বরের ছয় দিন, ফেব্রুয়ারিতে দুই দিন এবং মার্চ মাসে দুই দিন পতাকা বিক্রি করি। এ ছাড়া বছরের অন্য সময় মাস্ক বিক্রি করে সংসার চালাই।’

পতাকা বিক্রি করে খুব কম রোজগার হয় পল্টুর। তারপরেও দেশাত্মবোধ থেকেই পতাকা বিক্রি করেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দেশের প্রতি ভালোবাসার টানেই পতাকা বিক্রি করি। যখন নিজের দেশের পতাকা কারও হাতে তুলে দিই তখন অন্যরকম অনুভূতি হয়।’

টানাপড়েনের মধ্যে সংসার চালানোর কথা উল্লেখ করে পল্টু বলেন, ‘স্ত্রী, দুই মেয়ে, এক ছেলে, নাতিসহ ছয় জনের টানাপোড়েনের সংসার। প্রতিদিন যে আয় হয় তা দিয়ে সংসার চালাতে কষ্ট হয়। সংসারে প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা খরচ। কোনও কোনও দিন আয় হয় ৪শ’ থেকে ৫শ’ টাকা। প্রায় দিনই ঘাটতি থেকে যায়। অনেক সময় না টাকা জোগাতে পারলে কম খাই।’

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যের সঙ্গে পতাকার দামও অনেক বেড়েছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বাজারে জিনিসপত্রের যে ঊর্ধ্বগতি, সবকিছুর দাম এখন চড়া। আগে বড় সাইজের পতাকা ৬৫ টাকায় কিনতাম, এখন সেটি বেড়ে হয়েছে ৯৫ টাকা। এ ছাড়াও মাঝারি সাইজেরটি ৪০ টাকা ছিল, এখন সেটি ৬৫ টাকায় কিনতে হচ্ছে। ছোট সাইজের পতাকাও এখন ১০ টাকা থেকে বেড়ে ৪০ টাকায় পাইকারি কিনতে হচ্ছে। আগের চেয়ে লাভও কমেছে।’

ফেরি করে পল্টু আশপাশের জেলাতেও পতাকা বিক্রি করেন। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন ভেড়ামারা উপজেলার সাতবাড়িয়ার নিজ গ্রাম থেকে বিভিন্ন এলাকায় পতাকা বিক্রি করতে যাই। কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গাসহ বিভিন্ন জেলায় গিয়ে পতাকা বিক্রি করি। এসব পতাকা ঢাকা থেকে পাইকারি কিনে নিয়ে আসি।’