ফুলকপির মাঠে রঙিন হাসি

ফসলের জমিতে কেউ তুলছেন ছবি, আবার কেউ নিচ্ছেন চাষের পরামর্শ। পুরো ক্ষেতজুড়ে ছড়িয়ে আছে হলুদ, বেগুনি রঙের ফুলকপি। আর তা দেখতেই হাজির হয়েছেন স্থানীয়রা। এ যেন ক্ষেতজুড়ে এক উৎসব।

শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার দেউল গ্রামে রঙিন ফুলকপি চাষ করেছেন আব্দুল লতিফ মোল্লা। তা দেখতে প্রতিদিনই মানুষ তার জমিতে ভিড় করছেন।

লতিফ সারাবছর তার জমিতে নানা ধরনের সবজি চাষ করেন। তবে এবার তিনি রঙিন ফুলকপি চাষ করে দ্বিগুণ লাভ করেছেন। তার এমন সফলতা দেখে আগ্রহী হচ্ছেন স্থানীয় কৃষকরাও।

লতিফ জানান, বাজারে নেওয়ামাত্রই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে রঙিন এসব ফুলকপি। অনেকে আবার ক্ষেত থেকেই নিয়ে যাচ্ছেন।

রঙিন ফুলকপি হাতে আব্দুল লতিফ মোল্লাজেলাটিতে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে রঙিন ফুলকপি চাষ। শরীয়তপুর ডেভেলমেন্ট সোসাইটির (এসডিএস) সমন্বিত কৃষি ইউনিটের সহযোগিতায় ও উপজেলা কৃষি বিভাগের পরামর্শে লতিফ তার অল্প জমিতে শুধু জৈব সার প্রয়োগ করে চার রঙের ফুলকপি চাষ করেন।

লতিফ জানান, ১৬ শতক জমিতে চার রঙের ফুলকপির প্রায় দুই হাজার চারা রোপণ করেন। সব মিলে তার খরচ হয়েছে ২০ হাজার টাকা। কোনও ধরনের কীটনাশক বা সার ব্যবহার না করেই শুধু জৈব সার ব্যবহার করেন তিনি। চারা রোপণের ৭০ থেকে ৭৫ দিন পর বাগানে আসে রঙিন ফুলকপি। এখন বিক্রিও শুরু করেছেন।

তিনি আশা করছেন, বাগান থেকে দেড় লাখ টাকার মতো বিক্রি হবে এই রঙিন ফুলকপি।

লতিফ বলেন, ‘এ বছর প্রথমবারের মতো চাষ করায় কিছু ভুলভ্রান্তি হয়েছে। বিক্রি করা নিয়ে চিন্তায় ছিলাম। এবার তাই কম করে করেছি। কিন্তু প্রচুর লাভ হয়েছে। সারাবছর করলা, সজনে, লালশাক, টমেটোসহ অন্য সবজি চাষ করি। জমি থেকেই পাইকাররা বেশির ভাগ সময় নিয়ে যান। আগামীতে অন্য সবজি একটু কমিয়ে আরও জমিতে এই ফুলকপি চাষ করবো।’

সোনার দেউলিয়া এলাকার আরেক কৃষক আব্দুর রহিম। তিনিও এ বছর রঙিন ফুলকপি চাষ করেছেন। তিনি বলেন, ‘হলুদ ও বেগুনি ফুলকপি দেখতে অনেক সুন্দর। বাজারেও এর চাহিদা বেশি। তাই চাষ করেছি।’

আগামী বছর এসডিএস বীজ দিয়ে সহযোগিতা করলে এ ফুলকপির চাষ করবেন বলে জানান তিনি।

এসডিএসের কৃষি কর্মকর্তা খাজি আলম বলেন, ‘পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) সমন্বিত কৃষি ইউনিটের সহযোগিতায় এ অঞ্চলে ব্রোকলি, লেটুস, রেড বিট, রেড ক্যাবেজ, স্কোয়াস ও ক্যাপসিকামের চাষ করা হচ্ছে। এ বছর সর্বপ্রথম আব্দুল লতিফ মোল্লাকে হলুদ ও বেগুনি রঙের ফুলকপির বীজ দেওয়া হয়। তিনি এটি চাষ করেন, এখন বিক্রিও শুরু করেছেন। রঙিন ফুলকপি বিক্রি করে লাভ হয়েছে তার। আমরা কৃষককে ফুলকপি চাষে সব ধরনের পরামর্শ দিই। আগামীতে যারা চাষে আগ্রহী হবেন তাদেরও সহযোগিতা করবো।’

তিনি জানান, রঙিন ফুলকপিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় ক্যানসার ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমে।

আগামীতে এ অঞ্চলে ব্যাপকভাবে রঙিন ফুলকপির চাষ হবে বলে আশার কথা জানান এই কৃষি কর্মকর্তা।