রাজশাহী মেডিক্যালে নিপাহ ভাইরাসে মৃত্যু বেড়ে ৫

জ্বর, খিঁচুনির মতো সাধারণ লক্ষণ নিয়েই রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের নিউরো মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছিলেন ফরিদা ইয়াসমীন (২৫)। বুধবার (১ মার্চ) সকালের দিকে তার নিপাহ ভাইরাস শনাক্ত হয়। এরপর তার জটিলতা বাড়তে থাকে। রেফার্ড করা হয় নিপাহ আইসিইউতে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকেল ৫টার দিকে তার মৃত্যু হয়। নিপাহ ভাইরাস শনাক্ত হয়ে রামেক হাসপাতালে এ পর্যন্ত মোট পাঁচ জনের মৃত্যু হলো।

ফরিদা উপজেলার কশব ইউনিয়নের চকচোঁয়ার গ্রামের আব্দুল খালেকের স্ত্রী। একই লক্ষণ নিয়ে নিপাহ সাসপেক্টেড ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন ফরিদার শাশুড়ি। তার বয়স ৫৫ বছর। এছাড়া দুই সপ্তাহ আগে একই লক্ষণ নিয়ে নিজ বাসাতেই তার শ্বশুর আব্দুল হকের মৃত্যু হয়। যদিও পরিবার মনে করছে এটা স্বাভাবিক মৃত্যু। তবে চিকিৎসকদের ধারণা, তিনি নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন। 

রামেক হাসপাতালে যাদের মৃত্যু হয়েছে তাদের প্রত্যেকেরই খেজুরের রস পানের ইতিহাস রয়েছে। এছাড়া প্রত্যেকেই জ্বরের মতো সাধারণ লক্ষণ নিয়ে হাসপাতালের সাধারণ ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছিলেন। এরপর হঠাৎই শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। আইসিইউতে নেওয়া হলে মৃত্যু হয়। মৃত পাঁচ জনের মধ্যে একজনের নিপাহ শনাক্ত হয়েছে মৃত্যুর পর।

নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন এমন পরিবারের সদস্যদের বাড়তি সর্তকর্তার কথা বলছেন চিকিৎসকরা। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খেজুরের রস পানের তিন সপ্তাহের মধ্যে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এই সময়টুকু হাসপাতালের নিপাহ ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনা টিমের সঙ্গে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) সমন্বয় করে কাজ করছে। আক্রান্ত রোগীদের সংস্পর্শে আসা প্রত্যেকের নমুনা সংগ্রহ করা হয় এবং তদারকি করা হয়।

রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. আজিজুল হককে তত্বাবধায়ক করে একটি বিশেষ টিম গঠন করে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। টিমের তত্ত্বাবধায়ক মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. আজিজুল হক জানান, এ পর্যন্ত রামেক হাসপাতালে ছয় জনের নিপাহ ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে একজনের মৃত্যুর পর শনাক্ত করা হয়েছে। আর যে পাঁচ জনের বেঁচে থাকতেই শনাক্ত হয়েছিল, এরমধ্যে চার জনের মৃত্যু হয়েছে।

ডা. আজিজুল হক আরও জানান, মৃত রোগীদের স্বজনদের মাঝে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। তাই তাদের বাড়তি সর্তকতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। আর আইইডিসিআরের সঙ্গে সমন্বয় করে তারা কাজ করছেন। 

এ সময় খেজুরের রস পানে সর্তক হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

এ বিষয়ে রাজশাহী সিভিল সার্জন ডা. আবু ইউসুফ মোহাম্মদ ফারুক জানান, রোগীর স্বজনদের নিয়মিত তদারকির কিছু নেই। আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে আসা প্রত্যেকের নমুনা সংগ্রহ করে টেস্ট করেছে আইইসিসিআর। তবে খেজুরের রস পানে সবাইকে সর্তক থাকতে হবে।