জন্মগতভাবেই ইব্রাহিমের দুই হাত ও পা বাঁকা। ঠিকভাবে চলাফেরা করতে পারেন না। ঠিকমতো কিছু ধরতেও পারেন না। হামাগুড়ি দিয়ে চলাফেরা করতে হয় ইব্রাহিমকে। সব প্রতিবন্ধকতাকে হার মানিয়ে জীবন যুদ্ধে টিকিয়ে রেখেছেন নিজেকে।
২৩ বছর বয়সী ইব্রাহিম দিনাজপুর বালুয়াডাঙ্গা এলাকার দিনাজপুর ইন্সটিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (ডিআইএসটি) পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থী। ডিপ্লোমা শেষ পর্বের পরীক্ষা দিয়েছেন, ফলাফল প্রকাশ হয়নি এখনও। ইব্রাহিম জেলার পার্বতীপুরের ৯ নম্বর হামিদপুর ইউনিয়নের উত্তর চৌহাটি এলাকার সাইফুর ইসলামের ছেলে। তিন ভাই বোনের মধ্যে বড় ভাই ও বোনের বিয়ে হয়েছে। এখন বাবা-মাসহ তিন জনের সংসার। বাবা রাজমিস্ত্রির কাজ করে সংসার চালান।
ছোট একটি টুলে ভর দিয়ে চলাফেরা করতে হয় ইব্রাহিমকে। এভাবেই ছোট থেকে বড় হয়েছেন। স্কুল থেকে কলেজ পর্যন্ত যাওয়া-আসা করেছেন। পড়াশোনা করে নিজেকে শিক্ষিত ও প্রশিক্ষিত করেছেন। পার্বতীপুরে বাড়ি হলেও থাকেন দিনাজপুরের একটি হোস্টেলে।
এ সময় কথা ইব্রাহিমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমার বাবা রাজমিস্ত্রির কাজ করে অনেক কষ্টে পড়ালেখা করিয়েছেন। কিন্তু পড়ালেখার শেষ পর্যায়ে এসে এখন হতাশায় পড়ে গেছি। বর্তমান যে চাকরির অবস্থা। তার উপর আমি শারীরিক প্রতিবন্ধী। তবে আমাকে কেউ চাকরি দিলে আমি নিরাশ করবো না। আমি গ্রাফিক্স ডিজাইন, লোগো ডিজাইন, মার্কেটিং প্রমোশনের কাজগুলো করতে পারি। সরকারের কাছে আমার প্রত্যাশা একটি চাকরির।’
ইব্রাহিমের হোস্টেলের একই কক্ষের থাকা সৌরভ নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ভাই তো অনেক পড়ালেখা করে। তবে তিনি হতাশার কথাগুলো মাঝে মধ্যে আমাদের বলেন। আমরা বিশ্বাস করি ইব্রাহিম ভাইকে কেউ একটা চাকরি দিলে তিনি ভালো কাজ করে দেখাতে পারবেন।’
তার সহপাঠী প্রতীক কুমার রায় বলেন, ‘আমি এই কলেজে ভর্তি হওয়ার পর থেকে দেখি ইব্রাহিম টুলে ভর দিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে চলাফেরা করে। আমরা একই বিষয়ে পড়ালেখা করছি। ইব্রাহিম আমার চেয়ে ভালো ছাত্র। যে কাজগুলো সে শিখেছে সবটাই অনেক মন দিয়ে শিখেছে। আমি বিশ্বাস করি যদি কোনও প্রতিষ্ঠান তাকে চাকরি দেয়, দায়িত্ব সহকারে সে কাজ করবে। আর প্রতিষ্ঠানটিকে উচ্চস্তরে নিয়ে যেতে পারবে।’
ডিআইএসটি পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের কম্পিউটার সাইন্সের শিক্ষক সাহাদাত হোসেন বলেন, ‘ইব্রাহিম নিজের চেষ্টায় অনেক কিছু শিখেছে। গ্রাফিক্স ডিজাইন, ফটোশপ, মার্কেটিং প্রমোশন এসব কাজ সে ভালোভাবে করতে পারে। বর্তমানে মার্কেটিং প্রমোশনের কাজের অনেক চাহিদা। আমার বিশ্বাস ওকে কেউ চাকরি দিলে ইব্রাহিম তাকে নিরাশ করবে না। ইব্রাহিমের একটা চাকরি হলে তার বাবা-মাসহ সংসারের হাল ধরতে পারবে।’
ডিআইএসটি পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের অধ্যক্ষ মামুন ফেরদৌস বলেন, ‘ইব্রাহিম কম্পিউটার সাইন্সের ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী। ভর্তির সময় আমি হতাশ ছিলাম, কিন্তু এখন গর্ব করি তাকে নিয়ে। আমি মনে করি, সে যদি সরকারি কিংবা বেসরকারি চাকরি পায়। সেই স্থানে দক্ষতার ছাপ রেখে যেতে পারবে। তাকে একটু সুযোগ দেওয়া হয় এটা আমি সবার কাছেই আবেদন করবো। আর এটাও বলব, তাকে যেন তার জায়গা থেকে সহানুভূতির দৃষ্টিতে দেখা হয়।’