নিষেধাজ্ঞার ১৭ দিনেও সহায়তা পাননি ২ হাজার পরিবার

সাগরে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞার ১৭ দিনেও সরকারি সহায়তা পাননি ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার প্রায় দুই হাজার জেলে পরিবার। ফলে মানবেতর জীবনযাপন করছে পরিবারগুলো। অনেকে মহাজনদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে সংসার চালাচ্ছেন বলে জানা গেছে। 

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছ, উপজেলার চর দরবেশ, চর চান্দিয়া, সোনাগাজী সদর ও আমিরাবাদ ইউনিয়নে ১ হাজার ৯৯৭ জন নিবন্ধিত জেলে পরিবার রয়েছে। এর মধ্যে কার্ডধারী জেলের সংখ্যা প্রায় ১ হাজার ৫০০ জন। মাছের প্রজনন মৌসুমে উপজেলার নিবন্ধিত জেলেদের মধ্যে মাত্র ৩৪৫ জেলে পরিবারকে সরকারিভাবে সহায়তা দেওয়া হয়ে থাকে। কিন্তু নিষেধাজ্ঞার ১৭ দিনেও কোনও বরাদ্দ আসেনি।     

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার চর খোন্দকার, দক্ষিণ পূর্ব চর চান্দিয়া ও পূর্ব চর চান্দিয়া এলাকার জেলেরা সহায়তা না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অনেকে আবার পেটের দায়ে রাতে নদী ও সমুদ্রে গিয়ে মাছ শিকার করছেন। 

নিবন্ধিত জেলেরা জানান, সোনাগাজীতে প্রায় তিন হাজার জেলে রয়েছে। সরকারিভাবে মাত্র দুই হাজার জেলেকে নিবন্ধিত করা হয়েছে। মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞার সময়ে নিবন্ধিত জেলেরা সরকারি সহায়তা না পেয়ে মহাজনদের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে সংসার চালাচ্ছেন। 

চর খোন্দকার জেলেপাড়ার প্রিয়লাল জলদাস বলেন, ‘নদী ও সমুদ্রে মাছ ধরা বন্ধ। অনেক কষ্টে আমাদের জীবন চলছে। কেউ কেউ বিভিন্ন সড়কের পাশে জলাশয় ও পুকুর থেকে মাছ ধরে বিক্রি করে পরিবারের খাবার জোগাড়ের ব্যবস্থা করছেন। অনেক জেলে বিভিন্ন এনজিওর কাছ থেকে ঋণ নিয়েছেন। নদী ও সমুদ্রে মাছ ধরতে না পারায় ঋণের টাকাও পরিশোধ করতে পারছে না।’  
 
জেলে হরলাল জলদাস বলেন, ‘কিছুদিন আগে ঘূর্ণিঝড় হওয়ায় নদী ও সাগরের মাছ ধরতে যেতে পারিনি। এতে জেলে পরিবারগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন নিষেধাজ্ঞা থাকায় সমুদ্রে মাছ শিকার করতে পারছি না। সরকারি সহায়তাও পাইনি। জীবিকার তাগিদে বড় ফেনী নদীর তীরে মশারির জাল দিয়ে চিংড়ির পোনা ধরে কোনোরকমে সংসার চালাচ্ছি।’  

সোনাগাজী উপজেলার চর চান্দিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন মিলন বলেন, ‘সরকারিভাবে বরাদ্দ চাল পাওয়া মাত্রই জেলেদের মধ্যে বিতরণ করা হবে।’  

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তূর্য সাহা বলেন, ‘৬৫ দিন নদী ও সমুদ্রে মাছ ধরা বন্ধ রয়েছে। উপজেলার চারটি ইউনিয়নে প্রায় দুই হাজার নিবন্ধিত জেলে পরিবার রয়েছে। তবে সরকারিভাবে মাত্র ৩৪৫ পরিবারের জন্য প্রথম দফায় ৫৬ কেজি করে চাল বরাদ্দ আসবে। বরাদ্দ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা ইউপি চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে বিতরণ করা হবে। এরপর দ্বিতীয় দফায় আরও ৩০ কেজি কেজি চাল বিতরণ করা হবে। সরকারিভাবে আর কোনও সাহায্য আসার সম্ভাবনা নেই। তবে অন্য জেলেদের জন্যও সাহায্য পেতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন পাঠানো হয়েছে।’