যমুনায় বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি-জমি

দুই দিন পানি কমার পড়ে আবারও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বাড়তে শুরু করেছে সিরাজগঞ্জের যমুনা নদীর পানি। গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি শহর রক্ষা বাঁধ হার্ড পয়েন্ট এলাকায় ৯ সেন্টিমিটার এবং কাজীপুর মেঘাইঘাট পয়েন্টে ৮ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে জেলার অভ্যন্তরীণ নদ-নদীর পানিও বাড়তে শুরু করেছে।

মঙ্গলবার (১১ জুলাই) পানি বৃদ্ধির সঙ্গে জেলার এনায়েতপুরে শুরু হয়েছে তীব্র ভাঙন। গত দুই দিনে এই এলাকায় ১০টি বসতভিটা নদীতে বিলীন হয়েছে। নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে ঘর-বাড়ি, গাছপালা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ফসলি জমি। ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটছে নদীপাড়ের মানুষের। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতিতে ভাঙন দেখা দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।

মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে প্রতিদিনই নদীতে বিলীন হচ্ছে জেলার শাহজাদপুর, এনায়েতপুর ও চৌহালী উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা। পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। ভাঙনের মুখে থাকা ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন এলাকাবাসী। তাদের অনেকের দিন কাটছে খোলা আকাশের নিচে খেয়ে না খেয়ে। এনায়েতপুর থেকে শাহজাদপুর উপজেলার প্রাচীর পর্যন্ত ছয় কিলোমিটার নদীর ডান তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ কাজ চলছে। এ অবস্থায় ভাঙন দেখা দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দুর্গতরা।

এদিকে, ভাঙনের কবলে পড়ে গত এক সপ্তাহে কাজীপুরে মেঘাই ঘাট এলাকায় স্পার বাঁধের ৩০ মিটারসহ এনায়েতপুর, চৌহালী ও শাহজাদপুরের বসতবাড়ি, ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙনের মুখে রয়েছে আরও ফসলি জমিসহ নানা স্থাপনা। ভাঙন প্রতিরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্প চালু থাকলেও তা কোনও কাজে আসছে না বলে অভিযোগ ভাঙন কবলিত মানুষদের।

প্রায় দেড় বছর আগে ৬৪৭ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদনের পর সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরের প্রাচীর থেকে ব্রাহ্মণগ্রাম পর্যন্ত সাড়ে ছয় কিলোমিটার এলাকায় যমুনার ভাঙন প্রতিরোধে কাজ শুরু করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু স্থানীয়দের অভিযোগ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কারণে এ কাজ চলছে ধীরগতিতে। এতে গত দেড় বছরে ভাঙনের কবলে পড়ে বসতবাড়ি, ফসলি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে কয়েক হাজার পরিবার। বিশেষ করে, গত ১৫ দিনে ভাঙনের কবলে পড়ে জামালপুর, ব্রাহ্মণগ্রাম, আড়কান্দিসহ দক্ষিণাঞ্চলে শতাধিক বসতভিটা নদীগর্ভে চলে গেছে। এ ছাড়া চৌহালী ও বেলকুচিতে যমুনার উভয় তীরেই চলছে ভাঙন।

এনায়েতপুরের ব্রাহ্মণগ্রামের ফজল আলী বলেন, ‘এখানে আমার বাড়ি ছিল। ২৫ বছর সেই বাড়িতে বসবাস করেছি। দুই বিঘা জমি, চারটি ঘরসহ সংসারের সব এখন নদীর পেটে। কোথায় যাবো, কী করবো? কোনও উপায় না পেয়ে গ্রামের একটি মাদ্রাসার জমিতে বসবাস করছি। প্রতিদিনই ভাঙন হচ্ছে। এলাকার মানুষেরা নিঃস্ব হচ্ছে। মানুষ যাওয়ার জায়গা পাচ্ছে না।’

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘প্রকল্পের কাজ অব্যাহত রয়েছে। কাজ শেষ হতে কিছুটা সময় লাগবে। ভাঙনকবলিত এনায়েতপুর, জালালপুর, হাটপাঁচিল ও চৌহালীতে লাম্পিং কাজ চলছে। বর্ষকালে পানির জন্য প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন কঠিন।’ ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ ডাম্পিং অব্যাহত রয়েছে বলে তিনি জানান।