তিস্তার পানি বিপদসীমার ওপরে, ডুবছে নিচু এলাকা

ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা বর্ষণে তিস্তার পানি আজ বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) সকাল ৬টা ও ৯টায় বিপদসীমার ১৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। ফলে জলঢাকা ও ডিমলা উপজেলার তিস্তা তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে বসতবাড়িতে পানি উঠেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। ওই পয়েন্টে বিপদসীমা ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার।

এদিকে, তিস্তার পানি বৃদ্ধির ফলে ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই, খগাখাড়বাড়ী, টেপাখড়িবাড়ী, খালিশা চাপানী, ঝুনাগাছ চাঁপানী, গয়াবাড়ী ও জলঢাকার গোলমুন্ডা, ডাউয়াবাড়ী, শৌলমারী ও কৈমারী ইউনিয়নের নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন তিস্তাপাড়ের মানুষজন। চর এলাকায় বসবাসরত লোকজন উঁচু এলাকায় চলে আসছেন। এ ছাড়াও আমনের বীজতলা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষক। বানভাসিরা নৌকায় করে হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল নিয়ে আসছেন বাঁধের ওপর।

পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আসাফউদ্দৌলা প্রিন্স জানান, দুপুর ১২টায় ছয় সেন্টিমিটার কমে বিপদসীমার ১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে ব্যারাজ পয়েন্টে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি পরিমাপক (গেজ পাঠক) নূরুল ইসলাম বলেন, ‘গত ৮ জুলাই তিস্তার পানি বিপদসীমার ১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল। আজ হঠাৎ পাঁচ দিন পর সকালে ১৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে ব্যারাজ পয়েন্টে বন্যার পানি প্রবাহিত হয়। এতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে বাড়িঘরে পানি ঢুকেছে।’

স্থানীয়রা জানান, উজান থেকে নেমে আসা পানি বেড়ে নীলফামারী ও লালমনিরহাটের নদী তীরবর্তী চরের অনেক বসতবাড়িতে পানি ঢুকেছে। হঠাৎ তিস্তার পানি বাড়ায় গবাদি পশু-পাখির খাবার নিয়ে বিপাকে পড়েছেন গৃহস্থবাড়ির লোকজন।

উপজেলার টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের চড়খড়িবাড়ী গ্রামের মঙ্গুলু মামুদ বলেন, ‘তিস্তার পানি বাড়া কমায় চরাঞ্চলের ঘরবাড়ি নিয়ে আমরা খুব সমস্যায় থাকি। প্রত্যেক বছরে বর্ষার সময় এমন পানি আতঙ্কে পরিবার নিয়ে বসবাস করতে হয়।’

একই উপজেলার খগাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের খগাখড়িবাড়ী গ্রামের ব্যবসায়ী আব্দুল মোতালেব বলেন, ‘ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পানি ও টানা বর্ষণে তিস্তায় পানি বেড়েছে। বর্তমানে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে বাড়িঘরে পানি উঠেছে। স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণ করা ছাড়া এ সমস্যার বিকল্প নেই। বর্ষাকালে সরকার যে পরিমাণ অনুদান দিয়ে থাকে, ওই অর্থ দিয়ে স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণ করা সম্ভব। বর্ষায় পাউবোসহ সরকারি লোকজনের নজরদারি বাড়ে, কিন্তু পরে আর কোনও খবরই থাকে না।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তার পানি বাড়ায় সাময়িকভাবে একটু সমস্যা দেখা দিয়েছে। এ জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গ্রামপুলিশকে দিয়ে এলাকার লোকজনদের সতর্ক করা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন ও পাউবোর লোকজন বন্যা মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে।’

পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, ‘ভারত থেকে নেমে আসা উজানের পাহাড়ি ঢলে আজ তিস্তার পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যা মোকাবিলায় ব্যারেজের ৪৪টি স্লুইচ (জলকপাট) গেট খুলে দিয়ে পানি নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। আশা করি, সন্ধ্যা নাগাদ এই পানি আরও কমতে পারে। পানি উন্নয়ন বোর্ড বন্যা মোকাবিলায় সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে।’