সারিয়াকান্দিতে আবার বাড়ছে যমুনার পানি, ভাঙন আতঙ্ক

বগুড়া সারিয়াকান্দির যমুনা নদীর পানি আবারও বৃদ্ধি পাচ্ছে। পানি বিপদসীমার নিচে থাকলেও বিভিন্ন এলাকায় নতুন করে ভাঙন শুরু হয়েছে। এতে নদীর তীরে বসবাসকারীদের মধ্যে ভাঙন আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, ভাঙন এলাকায় বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে।

বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, পূর্ব বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলায় যমুনা নদীতে গত কয়েক মাস ধরে পানি উঠানামা করছে। গত ১ আগস্ট এ নদীতে পানির উচ্চতা ছিল ১৫.১০ মিটার। যা কয়েকদিনে বৃদ্ধি পেয়ে ৪ আগস্ট হয় ১৫.১১ মিটার। এরপর ৫ আগস্ট থেকে পানি কমতে শুরু করে। সেদিন কয়েক সেন্টিমিটার কমে পানির উচ্চতা হয় ১৫.০৫ মিটার। এর পরদিন আরও দুই সেন্টিমিটার কমে পানির উচ্চতা হয় ১৫.০৩ মিটার। গত ৭ আগস্ট থেকে পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। ওইদিন পানি ৯ সেন্টিমিটার বেড়ে উচ্চতা হয় ১৫.১২ মিটার। এরপর ৮ আগস্ট বৃদ্ধি পায় ১৬ সেন্টিমিটার, ৯ আগস্ট দুই সেন্টিমিটার। ১০ আগস্ট আট সেন্টিমিটার বেড়ে পানির উচ্চতা হয় ১৫.৩৮ মিটার। সর্বশেষ শুক্রবার সকাল ৬টায় সারিয়াকান্দিতে পানির উচ্চতা ছিল ১৫.৪৭ মিটার। সারিয়াকান্দিতে যমুনা নদীর পানির বিপদসীমা ১৬.২৫ মিটার। তাই পানি এখনও বিপদসীমার ৭৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এদিকে উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও বৃষ্টিতে আবারও যমুনার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। যমুনার বিভিন্ন চরের মানুষ তাদের গৃহপালিত পশু, আসবাবপত্র নিয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ, উঁচু স্থান বা বন্যা আশ্রয়ণকেন্দ্রে থাকার প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন। চরের নিচু এলাকাগুলো জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। ওইসব এলাকার মানুষ পানিবন্দি হতে শুরু করেছেন।

নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার কামালপুর ইউনিয়নের ইছামারা গ্রামের যমুনা নদীর ডানতীরে নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত কয়েকমাস আগে এ গ্রামের ৫০ মিটার এলাকার ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এরপর গত মঙ্গলবার থেকে এখানে পুনরায় ভাঙন শুরু হয়েছে। 

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, নতুন করে গত কয়েকদিনের ভাঙনে প্রায় ২৫০ মিটার এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভেঙে গেছে প্রায় ১০০ বিঘা ফসলি জমি। ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে কামালপুর ইউনিয়নের ইছামারা, গোদাখালি, পাইকরতলী, দড়িপাড়া এবং পার্শ্ববর্তী ধনুট উপজেলার ভান্ডারবাড়ী ও গোসাইবাড়ী ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী বিভিন্ন এলাকার অন্তত ২০ হাজার মানুষ।

ইউপি সদস্য আজাহার আলী মণ্ডল বলেন, ‘গত বুধবার থেকেই ইছামারা গ্রামে যমুনা নদী প্রবল হারে ভাঙতে শুরু করেছে। কিছুক্ষণ পরপরই বিশাল আয়তনের এলাকা নিয়ে মাটি যমুনা নদীতে ধসে যাচ্ছে। এভাবে নদী ভাঙতে থাকলে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধে বসবাস করা এলাকাবাসীরা শিগগিরই তাদের বাড়িঘর ভেঙে নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাবেন।’

বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল হক বলেন, ‘উজানে ভারী বৃষ্টি এবং পাহাড়ি ঢলের কারণে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। আরও পাঁচদিন বৃদ্ধি পেয়ে পানি পুনরায় স্থিতিশীল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে আগামী ১০ দিনের মধ্যে এ অঞ্চলে বড় বন্যার সম্ভাবনা নেই। নতুন করে ভাঙন কবলিত ইছামারা এলাকায় গত বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে ২৫০ কেজি ওজনের বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে, দু’একদিনের মধ্যেই ভাঙন ঠেকানো সম্ভব হবে।’