একান্ত সাক্ষাৎকারে মেয়র খুরশিদ হায়দার

‘কর না বাড়িয়েই মাগুরাকে মডেল পৌরসভা করব’

মাগুরা পৌরসভার মেয়র খুরশিদ হায়দার টুটুলমাগুরা পৌরসভার নির্বাচিত মেয়র খুরশিদ হায়দার টুটুল জেলা আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের সভাপতি ও সাবেক মেয়র, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক মরহুম আলতাফ হোসেনের ছেলে। ৪৬ বছর বয়সী অভিষিক্ত মেয়র টুটুল চান বাবার পথ অনুসরণ করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে। মাগুরাকে একটি মডেল পৌরসভা বানাতে তিনি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তার পরিকল্পনাগুলোর কথা বলেছেন খুরশিদ হায়দার টুটুল। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন মাজহারুল হক লিপু

বাংলা ট্রিবিউন: আপনার বাবা মরহুম আলতাফ হোসেন মাত্র কয়েক বছর আগে মাগুরা পৌরসভার মেয়র ছিলেন। সেই চেয়ারে বসে আছেন আপনি। কেমন লাগছে।

খুরশিদ হায়দার টুটুল: অবশ্যই খুব ভালো লাগছে।আমার বাবা মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছিলেন এবং দীর্ঘদিন মাগুরা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে কাজ করেছেন। তার ধ্যান জ্ঞান ছিল মানুষের পাশে থাকা। যতদিন মেয়র ছিলেন চেষ্টা করেছেন মানুষের পাশে থাকতে। তার ছেলে হিসেবে মানুষ আমাকেও কাছে টেনে নিয়ে বিপুল ভোটে নির্বাচিত করেছেন। এজন্য আমি পৌরবাসীর কাছে কৃতজ্ঞ এবং বাবার মতই মানুষের পাশে থাকতে চাই।

বাংলা ট্রিবিউন: দায়িত্ব গ্রহণের পর কোন সমস্যাটিকে বড় মনে হয়েছে?

খুরশিদ হায়দার টুটুল: মাত্র কয়েকদিন আগে দায়িত্বভার গ্রহণ করেছি। এসেই দেখছি পৌরসভার আর্থিক তহবিল প্রায় শূন্য।আমার আগের মেয়র মহোদয়ের আমলে পৌর-কর্মচারীরা নাকি ছয়মাস ধরে বেতন পান না। চার কোটি টাকা বিদ্যুৎ এবং সাড়ে সাত লাখ টাকা টেলিফোন বিল বাকি। বিষয়টা আমাকে ভাবিয়ে তুলেছে। পৌর-কর্মীদের পেটে যদি ভাত না থাকে তবে তাদের দিয়ে পৌরসেবা দেওয়া কঠিন কাজ। তাই আগে এই সমস্যার সমাধান জরুরি। আশা করছি খুব শিগগিরই এর সমাধান করতে পারব। 

বাংলা ট্রিবিউন: মেয়র হিসেবে পৌরবাসীর জন্য প্রথম কোন লক্ষ্যটি পূরণ করতে চান?

খুরশিদ হায়দার টুটুল: পৌরসভার সব কাঁচা রাস্তা পাকা করা। শহরের কোথাও জলাবদ্ধতা থাকবে না এটা আমার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল। আমি প্রথমেই এই দুটো কাজ সম্পন্ন করতে চাই।

বাংলা ট্রিবিউন: আর কোন কোন বিষয়ে মনোযোগী হবেন।

খুরশিদ হায়দার টুটুল: একটি পৌরসভার জন্য আবশ্যক বিষয় যেমন- রাস্তার বাতি, শহরের মানুষের জন্য সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা, পথচারীদের জন্য পানীয় জল, পর্যাপ্ত পাবলিক টয়লেটের ব্যবস্থা এবং শহরের শোভাবর্ধন। এসব দিকে গুরুত্ব দিতে চাই।

বাংলা ট্রিবিউন: মূলত ৯ নম্বর ওয়ার্ড হচ্ছে শহরের কেন্দ্রবিন্দু। অন্যান্য ওয়ার্ড বিশেষ করে শহরতলীর জন্য আপনার কি বিশেষ কোনও পরিকল্পনা আছে?

খুরশিদ হায়দার টুটুল: পৌরবাসী, সে যে ওয়ার্ডেরই হোক না কেন,সবাই আমার কাছে সমান গুরুত্বপূর্ণ। আগে দেখা গেছে শহরের প্রধান সড়কগুলোতে যতটা গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে শহরতলীতে ততটা গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। অনেক এলাকায় গেলে মনে হয় এটা পৌরসভা নয়, একটা গ্রাম মাত্র। অথচ তারা কিন্তু ঠিকই কর পরিশোধ করছেন। আমি চেষ্টা করব সব এলাকার মানুষ যেন পৌরসভার সুযোগ সুবিধা সমানভাবে ভোগ করে।

বাংলা ট্রিবিউন: আগের মেয়রের আমলে টেন্ডারে অনিয়মের আভিযোগ উঠেছিল। এ ব্যাপারে আপনার পরিকল্পনা কী?

খুরশিদ হায়দার টুটুল: আমি টেন্ডারবাজি করতে আসিনি। জনগণের সেবা করতে এসেছি। আপনাদেরকে আশ্বস্ত করতে চাই, সব ধরনের টেন্ডার নিয়মতান্ত্রিকতা ও স্বচ্ছতার সঙ্গে হবে।

বাংলা ট্রিবিউন:  একই রাস্তা বারবার কেন করা লাগে?

খুরশিদ হায়দার টুটুল: এটি এক ধরনের দুর্নীতি। কর্মকর্তা ও ঠিকাদারের যৌথ দুর্নীতির ফল ।চেষ্টা করব যাতে করে রাস্তার কাজগুলো মানসম্পন্ন হয়। প্রয়োজনে নিজে তদারক করব।

বাংলা ট্রিবিউন: সরকারের কাছে বিশেষ কোনও দাবি?

খুরশিদ হায়দার টুটুল:যুবসমাজ যেন মাদকাসক্ত না হয় এজন্য আমি আন্দোলন শুরু করেছি। প্রয়োজন পর্যাপ্ত পরিমাণ খেলার মাঠ, ক্রীড়া সরঞ্জাম, সংস্কৃতি কেন্দ্র ইত্যাদি। সরকারি পৃষ্ঠোপোষকতা পেলে আমি এগুলো করতে পারব। নাগরিক সুবিধা দেওয়ার জন্য যা বাজেট প্রয়োজন সে তুলনায় সরকারি বরাদ্দ অনেক কম। এ কারণে দেখা যায় পৌরবাসীর ওপর করের বোঝা বাড়িয়ে দিতে হয়। আশা করি বর্তমান সরকার সারাদেশে উন্নয়নের যে ধারা অব্যাহত রেখেছে মাগুরা পৌরসভার উন্নয়নেও   তা অব্যাহত রাখবে। আমি মাগুরাকে একটি মডেল পৌরসভা হিসেবে গড়ে তুলতে চাই, তবে সেটা পৌরকর বৃদ্ধি না করে। এ ব্যাপারে আমি সরকারের সুনজর প্রত্যাশা করছি।

/এআর/এমএসএম/ এইচকে/