সৎ ভাই রাসেদকে বিয়ের পর ‘জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ে’ সানজিদা

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার দুর্গম পাহাড়ি জঙ্গি আস্তানা থেকে গ্রেফতার সানজিদা খাতুন (১৮) বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার হাটশেরপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ নিজ বলাইল গ্রামের মেয়ে। সে তার সৎ ভাই রাসেদুর রহমান রাসেদকে বিয়ে করার পর নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’র সদস্য হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে। জঙ্গি সম্পৃক্তার কারণে রাসেদ আগে গ্রেফতার হয়েছিল। জেলে তাকে দেখানোর নামে ডেকে নিয়ে জঙ্গিরা তার প্রথম স্ত্রীকে হত্যা করে বলে অভিযোগ রয়েছে।

রবিবার (১৩ আগস্ট) এলাকাবাসী ও তার সৎ বাবা (শ্বশুর) আবদুল লতিফ সরদারের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। 

সারিয়াকান্দি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাজেশ কুমার চক্রবর্ত্তী জানান, এসব তথ্য তিনিও শুনেছেন। সানজিদা গ্রেফতারের পর তার বাড়ি শনাক্ত করা হয়েছে। ওই বাড়ি ও পরিবারের সদস্যদের প্রতি নজরদারি করা হচ্ছে।

সানজিদার সৎ বাবা (শ্বশুর) আবদুল লতিফ সরদার জানান, তার দুই ছেলে ও এক মেয়ে। বড় ছেলে রাসেদুর রহমান রাসেদ। ছোট ছেলে রাসেল মিয়া বাড়িতে থেকে অটোরিকশা চালায়। মেয়ে মিতা আক্তারের নারচি গোদাগাড়ী গ্রামে আনসার সদস্যের সঙ্গে বিয়ে হয়েছে। বড় ছেলে রাসেদ শেরপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও বয়রা কারিগরি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে। এরপর সে চাকরির উদ্দেশ্যে ঢাকায় চলে যায়। সেখানে ফুফুর বাসায় থাকতো। রাসেদ গত ২০১৬ সালের ২১ নভেম্বর ঢাকার যাত্রাবাড়ী থানার কাজলা এলাকার বাঁশপট্টি মাঠ থেকে জঙ্গি হিসেবে গ্রেফতার হয়। জেলে রাসেদের সঙ্গে দেখা করানোর নামে অন্য জঙ্গিরা তার স্ত্রীকে ডেকে নিয়ে হত্যা করে। কারণ রাসেদের প্রথম স্ত্রীর কাছে জঙ্গিদের অনেক তথ্য ছিল।

এদিকে ছয় মাস জেলে থাকার পর রাসেদ জামিনে ছাড়া পেয়ে নিজ বলাইল গ্রামের বাড়িতে চলে আসে। কয়েকদিন পর নওগাঁর একটি ইটভাটায় শ্রমিকের কাজ নেন। প্রায় পাঁচ বছর আগে রাসেদের মা রাসেদা বেগম সাপের কামড়ে মারা যান। ছয় মাস পর আবদুল লতিফ সরদার বিধবা মামাতো বোন আঞ্জুয়ারাকে বিয়ে করেন। তার (আঞ্জুয়ারা) এক ছেলে ও এক মেয়ে। এর মধ্যে সানজিদা খাতুন বড় মেয়ে ও সাজু মিয়া (৮) ছোট ছেলে। সাজু মিয়া বগুড়া শহরের একটি হোটেলে কাজ করে। সানজিদা খাতুন বগুড়ার শিশু পরিবারে থাকতো। সেখান থেকে সে এসএসসি পাস করে। রাসেদ বাড়িতে এলে তার সঙ্গে সানজিদা খাতুনের পরিচয় ও তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। 

গত ২০২২ সালের ৩০ জানুয়ারি তারা বিয়ে করে। বিয়ের পর সানজিদা নিজ বলাইল গ্রামের বাড়িতে থাকতো। আর রাসেদ নওগাঁর ইটভাটায় কাজ করতো। মাঝে-মধ্যে বাড়িতে স্ত্রী সানজিদার কাছে আসতো। ১১ দিন আগে রাসেদ বাড়িতে এসে সানজিদাকে নিয়ে যায়। এরপর গত শনিবার (১২ আগস্ট) পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের সদস্যরা মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার দুর্গম পাহাড়ি এলাকার জঙ্গি আস্তানা থেকে সানজিদা খাতুনসহ ১৩ জনকে গ্রেফতার করে।

সানজিদার সৎ বাবা (শ্বশুর) আবদুল লতিফ সরদার বলেন, ‘১১ দিন আগে রাসেদ ও সানজিদা খাতুনের সঙ্গে কথা হয়। এরপর তাদের সঙ্গে আর যোগাযোগ হয়নি। গতকাল জানতে পারি, পুলিশ জঙ্গি সম্পৃক্ততার কারণে সানজিদাকে গ্রেফতার করেছে। রাসেদ গ্রেফতার হয়নি। বর্তমানে সে কোথায় আছে তা আমার জানা নেই।’

তিনি দাবি করেন, জঙ্গি হয়ে গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে ছেলের সঙ্গে তার কোনও সম্পর্ক নেই। সানজিদা গ্রেফতারের পর নওগাঁর ইটভাটায় খোঁজ নিয়ে জেনেছেন, রাসেদ কয়েকদিন আগে কাজ ছেড়ে চলে গেছে। তিনি বলেন, ‘তারা অপরাধ করে থাকলে অবশ্যই তাদের বিচার হবে।’

সারিয়াকান্দি থানার ওসি রাজেশ কুমার চক্রবর্তী বলেন, ‘জঙ্গি আস্তানা থেকে সানজিদা খাতুন গ্রেফতারের পর তার বাড়ি শনাক্ত করা হয়। এরপর থেকে ওই বাড়ি ও সদস্যদের প্রতি নজরদারি করা হচ্ছে। সানজিদার স্বামী রাসেদ এর আগেও জঙ্গি সম্পৃক্ততায় গ্রেফতার হয়েছিল। তার আগের বউকে জঙ্গিরা ডেকে নিয়ে হত্যা করেছে বলে শুনেছি। তবে এ সংক্রান্ত সঠিক কোনও তথ্য পাইনি।’