জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে স্কুল শিক্ষার্থী জান্নাতিকে (১৫) হত্যা করা হয়েছে। হত্যার দায় স্বীকার করে জান্নাতির বাবা জাহেদুল, মা মোর্শেদা ও বড় চাচি শাহিনুর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। সোমবার (১২ মে) দুপুরে কুড়িগ্রাম চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে (সদর আমলি) তারা ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন। কুড়িগ্রাম সদর থানার ওসি হাবিবুল্লাহ এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে গতকাল রবিবার (১১ মে) জান্নাতির বাবা-মা ও চাচিকে হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার করে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা হত্যায় দায় স্বীকার করে। পরে জান্নাতির বাবার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বাড়ির পাশের বাঁশ ঝাড় থেকে মাটিতে পুঁতে রাখা অবস্থায় হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দা ও লোহার রড উদ্ধার করে পুলিশ।
গত শনিবার (১০ মে) সকালে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের কাগজিপাড়া গ্রামে নিজ বসতবাড়ির পাশে কৃষি জমি থেকে নবম শ্রেণি পড়ুয়া জান্নাতির রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তার মাথায় আঘাতের চিহ্ন ছিল। এ ঘটনায় জান্নাতির জেঠা খলিল বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেন। তবে জান্নাতির বাবা-মা ও চাচি (খলিলের স্ত্রী শাহিনুর) গ্রেফতারের পর থেকে তিনি পলাতক রয়েছেন।
জান্নাতি হত্যাকাণ্ডের পর তার পরিবার দাবি করে, জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের লোকজন রাতের বেলা জান্নাতিকে তুলে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে ফেলে রাখে। তবে তাদের এমন দাবির সত্যতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন স্থানীয়রা। তথ্যে অসঙ্গতি থাকায় পুলিশ প্রথম থেকেই জান্নাতির পরিবারকে সন্দেহ করে। পরে জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডে জান্নাতির বাবা-মা ও চাচির সম্পৃক্ততা পায় পুলিশ।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জান্নাতির বাবা জাহেদুল ও জেঠা খলিলের সঙ্গে একই এলাকার মজিবর ও মকবুল পাটোয়ারি গংয়ের জমি নিয়ে বিরোধ চলছে। এ ছাড়াও খলিল ও জাহেদুলের সঙ্গে তাদের আপন ভাই রফিকুলেরও জমি নিয়ে দ্বন্দ্ব চলমান। এসব নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে মামলাও রয়েছে। প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে গরু-ছাগল চুরি, খড়ের গাদায় আগুন দেওয়াসহ পরস্পরের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে।
এলাকার একাধিক নিরপেক্ষ সূত্রে জানা গেছে, জাহেদুল ও তার বড় ভাই খলিল জমি নিয়ে তাদের আপন ভাই রফিকুল ও তার স্ত্রী হালি বেগমকেও মারধর করেন। রফিকুল বাদী হয়ে মামলাও করেছেন।
জাহেদুলের বড় ভাই ও জান্নাতির চাচা রফিকুল বলেন, ‘জাহেদুল খুব খারাপ লোক। খলিল আর একরামুল মিলিয়া আমাক মারিয়া মাইনষেক ফাঁসার প্ল্যান করছিল। ওরা আমাক পাইলে এক ঘণ্টার মধ্যে মারি ফেলাইবে। ওরা নিজের মেয়েক নিজে মারছে। এটার কোনও ভুল নাই। মাইনষেক ফাঁসার জন্যে মারি ফেলাইছে।’
এদিকে এলাকাবাসীর অভিযোগ, জান্নাতিকে হত্যা করে প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর পেছনে জাহেদুলের বড় ভাই খলিল ও তার একাধিক সঙ্গীর মদত থাকতে পারে। এ ঘটনায় তাদের কোনও সম্পৃক্ততা রয়েছে কি না তাও খতিয়ে দেখার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
ওসি হাবিবল্লাহ বলেন, ‘জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষ মজিবর গংদের ফাঁসাতে জান্নাতিকে হত্যা করা হয়েছে। তার বাবা-মা ও চাচি হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। তাদেরকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।’