খুলনা মেডিক্যাল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ওষুধ ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের ঘটনার পর থেকে উভয় পক্ষ পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করছে। হামলাকারীদের আটকের দাবিতে শিক্ষার্থী ও ইন্টার্নি চিকিৎসকরা কর্মবিরতিসহ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছেন। অপরদিকে, ওষুধের ব্যবসায়ীরা দোকান বন্ধ রেখে বিক্ষোভ করেছেন। এ অবস্থায় প্রয়োজনীয় সেবা না পেয়ে এবং ওষুধ কিনতে না পেরে চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন রোগীরা।
হাসপাতালে আসা রোগীরা জানান, ইন্টার্নি চিকিৎসকরা হাসপাতালে সব সময় দায়িত্ব পালন করেন। তাদের অনুপস্থিতিতে স্বাভাবিক সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা। আবার ওষুধের দোকান বন্ধ থাকায় দু-তিন কিলোমিটার দূরে গিয়ে ওষুধ আনতে হচ্ছে। ফলে দুর্ভোগ সৃষ্টি হচ্ছে।
আন্দোলনরত ইন্টার্নি চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীরা জানান, বহিরাগতরা তাদের ওপর হামলা চালায়। হামলার পর পুলিশ জানায়, রাত ১২টার মধ্যে সব আসামিকে আটক করা হবে। শিক্ষার্থীরা সোমবার থানায় মামলা করতে গেলেও পুলিশ তা গ্রহণ করেনি। সুষ্ঠু বিচার না হওয়া পর্যন্ত তারা ক্লাসে ফিরবেন না।
তারা আরও জানান, ওই মার্কেটের ‘মেসার্স বিপ্লব মেডিসিন কর্নার’ নামে একটি ওষুধের দোকানে সোমবার ব্যাচ কে-৩১-এর এক শিক্ষার্থী ওষুধ কিনতে যান। দোকানদার অতিরিক্ত মূল্য চাওয়ায় তিনি প্রতিবাদ করেন। তখন ওই শিক্ষার্থীকে লাঞ্ছিত করা হয়। এরপর অন্যান্য শিক্ষার্থী গিয়ে এ বিষয়ে জানতে চাইলে দোকানদাররা জড়ো হয়ে তাদের ওপর হামলা করেন। এ ঘটনায় ২০ শিক্ষার্থী আহত হন। এ ঘটনার পর খুমেক হাসপাতালে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা কর্মবিরতি শুরু করেন।
দোকানিরা জানান, ওই শিক্ষার্থী ৭০ টাকার ওষুধ কেনার পর তিনি মোট দামের ওপর ১০ শতাংশ কমিশন চান। দোকানি ওই কমিশন দিতে রাজি না হওয়ায় দুজন বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। পরে মেডিক্যাল কলেজের হল থেকে শিক্ষার্থীরা এসে দোকানে ভাঙচুর চালান। ওষুধ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের কয়েক দফা সংঘর্ষ হয়। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এ হামলার পর দোকান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেন ওষুধ ব্যবসায়ীরা।
হাসপাতালের চিকিৎসক জ্যোতির্ময় বৈরাগী বলেন, ‘আমাদের ওপর যারা হামলা করেছে, তারা গ্রেফতার না হওয়া পর্যন্ত আমাদের কর্মবিরতি চলবে।’
ওষুধ ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জিল্লুর রহমান জুয়েল বলেন, ‘হামলায় ৯ জন ব্যবসায়ী আহত হন। শিক্ষর্থীরা একটি দোকানের ভেতরে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছে। অন্যান্য দোকানের শাটার ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। যেকোনও ধরনের সংঘাত এড়ানোর জন্য আমাদের দোকানগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে।’
খুমেক হাসপাতালের উপাধ্যক্ষ মেহেদী নেওয়াজ বলেন, ‘হামলার পর থেকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আছি আমরা। আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা করিয়েছি। থানায় মামলা করার জন্য তাদের সঙ্গে ছিলাম। পরবর্তী সময় এই শিক্ষার্থীরা যেভাবে চাইবে সেভাবে তাদের সঙ্গে থাকবো।’
খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে উপ-পরিচালক ডা. নিয়াজ মুস্তাফিজ চৌধুরী বলেন, ‘শিক্ষার্থী ও চিকিৎসকদের ওপর হামলার ঘটনা দুঃখজনক। আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। রোগীদের ভোগান্তির বিষয় মাথায় রেখে পর্যাপ্ত ওষুধ মজুত রাখা হয়েছে। এ ছাড়া ইন্টার্নি চিকিৎসকদের অনুপস্থিতিতে চিকিৎসক সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।’ তিনি জানান, হামলার ঘটনায় কলেজ কর্তৃপক্ষ আইনগত এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
সোনাডাঙ্গা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোমতাজুল হক জানান, খুমেক হাসপাতালে সংঘাতের ঘটনায় এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে। পুলিশ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে।