‘আপনাদের মতো বহু সাংবাদিক জন্ম দিছি’

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) ফোন নম্বর ‘ক্লোন’ করে একই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম রব্বানী সরকারের ভাইয়ের কাছে ফোনে এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করার অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি ইউএনও’কে অবহিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেছেন উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম রব্বানী সরকার। এ নিয়ে এই প্রতিবেদকের পক্ষ থেকে উপজেলা চেয়ারম্যানকে ফোন করলে তিনি সাংবাদিক ও সাংবাদিকতা নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেন। বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকরা ইউএনও’কে ফোন না দিয়ে কেন বারবার তাকে ফোন দিচ্ছেন এ প্রশ্ন তোলেন তিনি। বুধবার (৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে এ ঘটনা ঘটে।

গোলাম রব্বানী সরকার বলেন, ‘ইউএনওর নম্বর ক্লোন করে আমার ভাইকে ফোন দিয়ে এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়েছে। আমি ইউএনও’কে বিষয়টি জানিয়েছি। আপনারা তাকে (ইউএনও) ফোন করে জানুন। আমাকে কেন সাংবাদিকরা বারবার ফোন করে বিরক্ত করছেন?’

‘বিষয়টি ইউএনও’কে জানানোয় আমার ভুল হয়েছে। যত যত সাংবাদিক আমাকে ফোন দিচ্ছেন, এখন উত্তর দিতে দিতে অবস্থা খারাপ’– ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন তিনি।

আপনার ভাইকে ফোন করে চাঁদা চেয়েছে এবং বিষয়টি আপনি ইউএনও’কে জানিয়েছেন বলে আপনাকে হয়তো সবাই ফোন করছেন, এমন কথা জানলে উপজেলা চেয়ারম্যান বলেন, ‘কী সাংবাদিকতা করেন? কী লিখবেন! আপনারা সাংবাদিকরা ফোন দিতেই আছেন। এত বুঝাইয়েন না আমাকে। আপনাদের মতো বহু সাংবাদিকের জন্ম দিছি।’

উপজেলার চেয়ারম্যানের এমন ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানিয়ে তার বক্তব্য প্রত্যাহারের অনুরোধ জানালে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন।

এর আগে বুধবার সকালে গোলাম রব্বানীর ভাই ও স্থানীয় ব্যবসায়ী গোলাম মোস্তফা সরকারের নাম্বারে কে বা কারা ইউএনও প‌রিচ‌য়ে ‌ফোন ক‌রে এক লাখ টাকা ‘চাঁদা দাবি’ করেন। প‌রে এ নি‌য়ে ইউএনওকে অ‌ভি‌যোগ ক‌রেন উপ‌জেলা চেয়ারম্যান।

গোলাম মোস্তফা সরকার বলেন, ‘আমার ফোনে ইউএনওর নম্বর সেভ ছিল। সকালে ওই নম্বর থেকে ফোন করে আমাকে ইউএনও ফুলবাড়ী পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তি টাকা দাবি করে। নম্বরটির প্রথমে +০০০৮৮ ছিল। আমাকে আরেকটি নম্বর দিয়ে সেটাতে যোগাযোগ করতে বলে। পরে বিষয়টি আমার ভাইকে (গোলাম রব্বানী সরকার) জানাই। তিনি ইউএনওকে জানিয়েছেন।’

জানতে চাইলে ইউএনও সিব্বির আহমেদ বলেন, ‘উপজেলা চেয়ারম্যান আমাকে ফোন করে জানান, আমার নম্বর ক্লোন করে তার ভাইয়ের কাছে এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়েছে। আমি বিষয়টি থানা পুলিশকে জানিয়েছি। পাশাপাশি উপজেলা প্রশাসনের ফেসবুক পেজে একটি সতর্কতামূলক পোস্ট দিয়েছি।’

উপজেলা চেয়ারম্যান ও তার ভাইয়ের দাবির সত্যতা যাচাইয়ের প্রশ্নে ইউএনও বলেন, ‘আমি তা করিনি।’

প্রসঙ্গত, উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম রব্বানী সরকার প্রায়ই স্থানীয় সংবাদকর্মীদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেন। নির্মাণের কয়েক দিনের মাথায় উপজেলার একটি কালভার্ট উল্টে যাওয়া নিয়ে স্থানীয় এক সাংবাদিক সম্প্রতি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। এ নিয়ে গত আগস্ট মাসে সাংবাদিকদের সঙ্গে উপজেলা প্রশাসনের এক মতবিনিময়ে তিনি স্থানীয় ওই সাংবাদিককে রাগারাগি করেন এবং তার সাংবাদিকতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন বলে অভিযোগ ওঠে। এ ছাড়াও উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়েও নানা ধরনের অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।