X
শনিবার, ০৩ মে ২০২৫
২০ বৈশাখ ১৪৩২

করোনার টিকা নিয়ে ৪ বছর ধরে ‘অজানা রোগে’ ভুগছেন সাংবাদিক বিষ্ণু

মোংলা প্রতিনিধি
১৩ মে ২০২৪, ১৮:৫২আপডেট : ১৩ মে ২০২৪, ১৮:৫২

করোনা প্রতিরোধে অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের যৌথভাবে তৈরি কোভিশিল্ড টিকা নেওয়ার পর থেকে একাত্তর টেলিভিশনের সাংবাদিক বিষ্ণু প্রসাদ চক্রবর্ত্তীর পিছুই ছাড়ছে না রোগ। নানা রোগ বাসা বেঁধেছে তার শরীরে। এসব রোগ নিয়ে সন্দিহান খোদ চিকিৎসকরা। একাধিকবার শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেও নির্ণয় করা যায়নি রোগটি। তাই দীর্ঘদিন ধরে অজানা রোগে ভুগছেন এই সাংবাদিক।

বিষ্ণু প্রসাদ একাত্তর টেলিভিশনের বাগেরহাট জেলার নিজস্ব প্রতিবেদক। এছাড়া তিনি কালের কণ্ঠ ও বার্তা সংস্থা ইউএনবিরও বাগেরহাট প্রতিনিধি। করোনার টিকা নেওয়ার পর থেকে বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে ৩৩ বছর ধরে সংবাদের পেছনে ছুটে চলা বিষ্ণুর সাংবাদিকতায় গতি কমেছে। সংবাদের খোঁজে সবসময় ছুটে চলা এই সাংবাদিক লড়ছেন নানা শারীরিক সমস্যায়। বর্তমানে দেখা দিয়েছে নতুন অস্বস্তি। আগামী ১০ জুন এই অস্বস্তিসহ পুরোনো উপসর্গ নিয়ে আবারও ভারতের হায়দ্রাবাদ ও ভেলরে যাবেন চিকিৎসার জন্য।

বিষ্ণু প্রসাদ চক্রবর্ত্তী রবিবার (১২ মে) বিকালে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘২০২১ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি কোভিশিল্ড টিকার প্রথম ডোজ নেওয়ার এক ঘণ্টার মধ্যে শরীরে নানা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে শুরু করে। টিকা নিয়ে তিন বছরের বেশি সময় ধরে অসুস্থ আমি। দেশে-বিদেশে চিকিৎসা নিয়েও সুস্থ হতে পারেনি। চিকিৎসকের পরামর্শে আগামী ১০ জুন আবারও দেশের বাইরে যাবো। দুই সপ্তাহ আগেও মস্তিস্কে নতুন করে আরেক অস্বস্তি দেখা দিয়েছে। মাথার ভেতরে প্রচণ্ড ঝাঁকুনি দেয়। এই সময়ে দাঁড়িয়ে বা বসে থাকা কষ্টকর।’

টিকা নেওয়ার পর থেকে একের পর এক উপসর্গ দেখা দেয় শরীরে উল্লেখ করে এই সাংবাদিক আরও বলেন, ‘এর মধ্যে রয়েছে জ্বর, বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসা, মাথায় ব্যথা, গলাব্যথা, মুখ ও গলা শুকিয়ে আসা, কথা বলতে কষ্ট হওয়া, স্মৃতিশক্তি লোপ ও শরীরের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলা ইত্যাদি। এসব কারণে ঠিকমতো খাবারও খেতে পারছি না। পরিপূর্ণ খাবার খেলে অস্বস্তি লাগে। এজন্য সকালে এক টুকরো এবং রাতে এক টুকরো রুটি খেয়ে কোনও রকম বেঁচে আছি। ঘর থেকে বের হতে পারছি না। তাই বাগেরহাট শহরের শালতলা এলাকায় নিজ বাড়িতে বাবা-মা ও ভাইবোনদের সঙ্গে নিভৃতে দিন কাটাচ্ছি।’

তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, টিকা নেওয়ার পর অসুস্থ বিষ্ণু প্রসাদকে প্রথমে বাগেরহাটের চিকিৎসকরা চিকিৎসা দেন। এরপর খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সিসিউতে দুই দফায় ভর্তি করা হয়। শারীরিক অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় ২০২১ সালের ১৬ মার্চ ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে রেফার্ড করেন চিকিৎসকরা। একটানা ২১ দিন সেখানে ভর্তি ছিলেন। সেখানে চিকিৎসকরা তার বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেও রোগ নির্ণয় করতে পারেননি। এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য ২০২১ সাল থেকে ২০২৩ সালের ১৯ জুলাই পর্যন্ত ভারতের বেঙ্গালুরুতে নারায়ণা ইনিস্টিটিউট অব কার্ডিয়াক সায়েন্স হাসপাতালে একবার, হায়দ্রাবাদে এআইজি হাসপাতালে দুবার এবং ভেলোরের সিএমসি হাসপাতালে দুবার চিকিৎসা নেন।

বিষ্ণু প্রসাদ বলেন, ‘টিকা নেওয়ার আগ পর্যন্ত সম্পূর্ণ সুস্থ ছিলাম। দেশব্যাপী উদ্বোধনের প্রথমদিন প্রথম যে পাঁচ জন টিকা নিয়েছিল, তাদের মধ্যে আমি একজন। অসংখ্য উপসর্গের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে আছি। এভাবে বেঁচে থাকা কঠিন।’

বাগেরহাট জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. অসীম কুমার সমাদ্দার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘টিকা নেওয়ার পর থেকে সাংবাদিক বিষ্ণু প্রসাদ অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার চিকিৎসায় বাগেরহাট জেলা হাসপাতাল, খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং ঢাকায় বিএসএমএমইউতে মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়। এরপর নিজ উদ্যোগে কয়েকবার ভারতের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। দেশে-বিদেশে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেও রোগ নির্ণয় করা যায়নি। এরপরও উন্নত চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছি আমরা।’

প্রসঙ্গত, ব্রিটিশ-সুইডিশ কোম্পানি অ্যাস্ট্রাজেনেকা বাজার থেকে সব ধরনের কোভিড ভ্যাকসিন তুলে নিতে শুরু করেছে। মার্চেই এই টিকা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছিল তারা। কোভিড মহামারি আসার পর থেকে বিশ্বজুড়ে ৩০০ কোটিরও বেশি ডোজ টিকা দেওয়ার পর এই ঘোষণা দিলো। এই খবরে পুরো বিশ্বের মতো উদ্বেগ তৈরি হয়েছে বাংলাদেশেও। 

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আসলেও টিকা গ্রহণকারীদের শরীরে কোনও প্রভাব পড়েছে কিনা বা কতটুকু পেড়েছে, এ নিয়ে জরিপ বা গবেষণার ফল পাওয়ার আগে কিছু বলা সম্ভব নয়।

অ্যাস্ট্রাজেনেকা বলছে, কোভিড-১৯ টিকার নতুন সংস্করণের উদ্বৃত্ত থাকা ও চাহিদা কমে যাওয়ায় তারা টিকা তুলে নেওয়ার এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর সঙ্গে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কোনও সম্পর্ক নেই। তবে এর আগে তারা ব্রিটেনের আদালতে এটাও স্বীকার করেছে, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে তাদের তৈরি ‘ভ্যাক্সজেভ্রিয়া’ টিকার কারণে রক্ত জমাট বাঁধা ও রক্তচাপ কমে যাওয়ার মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে।

করোনা প্রতিরোধে অক্সফোর্ড ও অ্যাস্ট্রাজেনেকা একই টিকা দুই জায়গায় উৎপাদন করেছিল। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি টিকার নাম দেয় কোভিশিল্ড, আর ইউরোপে তৈরি টিকার নাম দেওয়া হয় ভ্যাক্সজেভ্রিয়া।

/এসও/এএম/
সম্পর্কিত
মুক্ত গণমাধ্যম দিবস‘কর্মীদের আর্থিক নিরাপত্তা ছাড়া গণমাধ্যম স্বাধীন হবে না’
বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসসব কালো আইন বাতিলের দাবি ডিআরইউর
ডুরার সভাপতি আবির, সম্পাদক জহির
সর্বশেষ খবর
‘আমাদের শিরোপা স্বপ্ন নেই বললেই চলে’
‘আমাদের শিরোপা স্বপ্ন নেই বললেই চলে’
গাজীপুরে ঝুটের গুদামে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৬ ইউনিট
গাজীপুরে ঝুটের গুদামে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৬ ইউনিট
১২ দফা দাবিতে অভিভাবক ঐক্য ফোরামের মানববন্ধন
১২ দফা দাবিতে অভিভাবক ঐক্য ফোরামের মানববন্ধন
মৌসুমী ভুলে যেতে চান, তিনি ‘মৌসুমী’ ছিলেন!
মৌসুমী ভুলে যেতে চান, তিনি ‘মৌসুমী’ ছিলেন!
সর্বাধিক পঠিত
কেন আবারও আন্দোলনে যাচ্ছেন সহকারী প্রাথমিক শিক্ষকরা?
কেন আবারও আন্দোলনে যাচ্ছেন সহকারী প্রাথমিক শিক্ষকরা?
‘নারী সংস্কার কমিশনের প্রতি ঘৃণা উসকে দেওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন’
‘নারী সংস্কার কমিশনের প্রতি ঘৃণা উসকে দেওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন’
আগে রওনা দিয়েও এড়ানো গেলো না ‘নোটাম’, শাহজালালের ফ্লাইট গেলো ওসমানীতে
আগে রওনা দিয়েও এড়ানো গেলো না ‘নোটাম’, শাহজালালের ফ্লাইট গেলো ওসমানীতে
‘স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় ফার্মাসিস্ট যুক্ত করার কথা ভাবছে সরকার’
‘স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় ফার্মাসিস্ট যুক্ত করার কথা ভাবছে সরকার’
কমোডের ওয়াটার ট্যাংক পরিষ্কার করবেন যেভাবে
কমোডের ওয়াটার ট্যাংক পরিষ্কার করবেন যেভাবে