যোগদান করেননি পিআইও, উল্টো বদলি আদেশ বাতিল

নানা অভিযোগে সমালোচিত কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) সিরাজুদ্দৌলাকে বান্দরবানের থানচিতে বদলি করা হলেও নির্দিষ্ট তারিখে তিনি যোগদান করেননি। উল্টো ১১ দিনের মাথায় তার বদলির আদেশ বাতিল করা হয়েছে।

সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) অধিদফতরের উপ-পরিচালক (প্রশাসন-১) ও সিনিয়র সহকারী সচিব এস এম সোহরাব হোসেন স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে। আদেশটি অধিদফতরের ওয়েব সাইটেও প্রকাশ করা হয়েছে।

এর আগে গত ১৪ সেপ্টেম্বর একই কর্মকর্তা স্বাক্ষরিত আদেশে সিরাজুদ্দৌলাকে বান্দরবানের থানচি উপজেলায় বদলি করা হয়।

আদেশে থানচির পিআইও মো. সুজন মিয়াকে উলিপুর উপজেলায় বদলি করা হয়েছিল। উভয় কর্মচারীকে আগামী ২০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পদায়নকৃত কর্মস্থলে যোগদান করার নির্দেশ দিয়েছিল অধিদফতর। অন্যথায় ২১ সেপ্টেম্বর অপরাহ্নের পর বর্তমান কর্মস্থল থেকে তারা তাৎক্ষণিকভাবে অবমুক্ত বলে গণ্য হবেন বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়েছিল।

তবে সেই আদেশ মেনে পিআইও সিরাজুদ্দৌলা থানচিতে যোগদান করেননি। বরং তিনি বদলি ঠেকাতে নানা তদবির করতে শুরু করেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

উলিপুর উপজেলা প্রশাসনের একাধিক সূত্র জানায়, নির্দিষ্ট তারিখে বদলিকৃত কর্মস্থলে যোগদান না করে সিরাজুদ্দৌলা বদলি ঠেকাতে অধিদফতরে লবিং করেন। সেই তদবিরের ফল হিসেবে তার বদলি আদেশ বাতিল করা হয়ে থাকতে পারে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘পিআইও সিরাজুদ্দৌলা প্রয়োজনে পীর বদলান। এবার কোন পীরের মাধ্যমে বদলি বাতিল করেছেন কে জানে!’

বদলির আদেশ বাতিলের বিষয়ে জানতে পিআইও সিরাজুদ্দৌলা বলেন, ‘আমি এখনও আদেশ দেখিনি।’

আদেশ অনুযায়ী নির্ধারিত তারিখে বদলিকৃত কর্মস্থলে যোগদান না করার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘আমাকে এমপি স্যার (স্থানীয় সংসদ সদস্য এমএ মতিন) যোগদান করতে বারণ করেছিলেন। তিনি বিষয়টি দেখতে চেয়েছিলেন। এজন্য যোগদান করিনি।’

আদেশ বাতিলে সংসদ সদস্যের ভূমিকা প্রশ্নে পিআইও বলেন, ‘হতে পারে। তিনি চেষ্টা করবেন বলেছিলেন’

প্রসঙ্গত, পিআইও সিরাজুদ্দৌলার বিরুদ্ধে প্রকল্প বাস্তবায়ন না করে বিল প্রদান, সময়মতো প্রকল্প বাস্তবায়ন না করা, প্রকল্পের টাকা ফেরত দেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের অধীন ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পের দরপত্রের লটারিতে ফলাফল পাল্টে নিজ সহকর্মীর ভাইয়ের নামে কাজ দেওয়ার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন আইনে মামলাও চলমান রয়েছে। এসব অভিযোগ ছাড়াও তার বিরুদ্ধে নিয়মিত মাদক সেবনের অভিযোগ তোলেন উলিপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম হোসেন মন্টু। এ নিয়ে এর আগে পিআইওর ডোপ টেস্টেরও দাবি তোলেন চেয়ারম্যান। নানা কারণে চেয়ারম্যানের সঙ্গে সিরাজুদ্দৌলার দূরত্ব তৈরি হয়েছে। উপজেলা চেয়ারম্যান এবং স্থানীয় সংসদ সদস্যের মধ্যেও রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারসহ নানা কারণে মতবিরোধ চলে আসছে।