রাজশাহীতে ডা. কাজেমের হত্যার ঘটনায় আসামিদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছেন চিকিৎসকরা। এ সময়ের মধ্যে হত্যাকারীদের গ্রেফতার করা না হলে ধর্মঘটে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) সকালে মানববন্ধন থেকে এ আল্টিমেটাম দেওয়া হয়। রাজশাহী মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের আয়োজনে ক্যাম্পাসের সামনে এই মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। মানববন্ধনে চিকিৎসকরা ছাড়াও রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিক্ষার্থীরাও অংশ নেন।
রাজশাহী মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. এবি সিদ্দীকের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য দেন– সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. নওশার আলী। তিনি বলেন, ‘শান্তির নগরীর রাজশাহীতে হত্যার ঘটনা খুবই উদ্বেগজনক। আমরা ডাক্তাররা চরম আতঙ্কের মধ্যে দিয়ে দিন পার করছি। আমরা আমাদের স্বাভাবিক চিকিৎসাসেবায় মনোনিবেশ করতে পারছি না।’
রামেক অধ্যক্ষ ডা. নওশার আলী বলেন, ‘আইন শৃঙ্খলা বাহিনী এখনও ডা. কাজেমের খুনিদের শনাক্ত করতে পারেনি। আমরা চাই, আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের শনাক্ত করে দ্রুত আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।’ এ সময়ের মধ্যে গ্রেফতার না হলে ধর্মঘটসহ বৃহত্তর কর্মসূচি দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
নিহতরা হলেন– রাজশাহী ইসলামী ব্যাংক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ গোলাম কাজেম আলী আহমেদ এবং নগরীর চন্দ্রিমা থানার কচুয়াতৈল এলাকার গ্রাম্য চিকিৎসক এরশাদ আলী দুলাল।
জানা গেছে, ডা. কাজেম আলী রাজশাহী অঞ্চলের নামকরা চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ। তিনি রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের এমবিবিএস ৪২তম ব্যাচের ছাত্র ছিলেন। তিনি রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগে রোগী দেখতেন। এ ছাড়াও নগরীর ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল এবং পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়মিত রোগী দেখতেন। ডা. কাজেম হত্যায় নগরীর রাজপাড়া থানায় মামলা দায়ের করেছেন তার স্ত্রী ডা. ফারহানা ইয়াসমিন। সোমবার (৩০ অক্টোবর) দুপুরে তিনি এই মামলা করেন। মামলার এজাহারে আসামি অজ্ঞাত উল্লেখ করা হয়েছে।
নগরীর রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল হক বলেন, ‘ডা. কাজেম আলীর লাশ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। তার স্ত্রী থানায় মামলা দায়ের করেছেন। আমাদের তদন্ত চলছে। বেশকিছু সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করেছি। আশা করা যাচ্ছে, খুব দ্রুতই এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটনসহ আসামিদের গ্রেফতার করা যাবে।’
অপরদিকে, শাহমখদুম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইসমাইল হোসেন জানান, জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে স্বজনরাই দুলালকে অপহরণ করে বলে পরিবার অভিযোগ করে। অপহরণের পর চন্দ্রিমা থানায় একটি অভিযোগও করা হয়। এর তিন ঘণ্টার মধ্যে শাহমখদুম থানা এলাকায় তার লাশ পাওয়া যায়।
নগরীর চন্দ্রিমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুব হোসেন বলেন, ‘নিহত দুলালের ভাই রুহুল আমিন বাদী হয়ে অজ্ঞাত ৭ থেকে ৮ জনের নামে মামলা দায়ের করেছেন। এর আগে পরিবার অপহরণের অভিযোগ করেছিল। আমরা সবকিছু মাথায় নিয়ে তদন্ত করছি। তবে হত্যাকাণ্ডটি জমিজমা নিয়ে বিরোধের জেরে হতে পারে। আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’