নৌকায় ভোট না দিলে হত্যার হুমকি, আ.লীগ নেতার বিরুদ্ধে মামলা

মানিকগঞ্জ-২ আসনে নৌকায় ভোট না দিলে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মীদের গুলি করে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগে সিংগাইর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আলী ইস্কান্দারের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বাদী হয়ে এ মামলা করেছেন।

এ ছাড়া জেলার হরিরামপুরে নৌকা প্রতীকে ভোট না দিলে হত্যার হুমকির অভিযোগে উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদ মোল্লার বিরুদ্ধেও পৃথক একটি মামলা হয়েছে।

সর্বশেষ আলী ইস্কান্দারকে নিয়ে এমপি মমতাজ বেগম বুধবার বিকালেও সিংগাইরের বিভিন্ন স্থানে নির্বাচনি সভা করেছেন। যা নিয়ে দলীয় ফোরামে ব্যাপক সমালোচনা হয় বলে জানা গেছে।

মামলার এজাহার এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার বিকাল ৪টার দিকে উপজেলার তালেবপুর ইউনিয়নের ইরতা গ্রামে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়ান জাহিদ আহমেদের কর্মী শাহিনুর ইসলাম, আবদুর রাজ্জাক, মো. মিনহাজ স্বতন্ত্র প্রার্থীর ট্রাক প্রতীকে ভোট চেয়ে ছোট পোস্টার (হ্যান্ড বিল) বিতরণ করছিলেন। এ সময় সেখানে উপস্থিত হন উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা আলী ইস্কান্দার। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মীদের হাত কেটে নেওয়াসহ নানা হুমকি-ধামকি দেন।

এ সময় আলী ইস্কান্দার উচ্চস্বরে বলেন, ‘এবার আমার দেখার আছে। আমি তো কেন্দ্রের ভেতরে থাকবো। নৌকা প্রতীকে ভোট না দিলে হাত কাইটা ফালামু। রেডি থাইকো। সাহস থাকে পাল্লা লইবা আমার লগে। কে আছে আমার এগেনেস্টে যাবে। লজ্জা করে না তোমাদের। দেখার আছে আমার। খোদার কসম, দেখার আছে এই বার। চৌদ্দ শিকে ঢুকাইয়া ছাইড়া দিমু। সরকার আমার, পাওয়ার আমার, প্রশাসন আমার, এমপি আমার। যাইও, ভোট দিবার যাইও ট্রাক মার্কায়। ট্রাকের চাকার তলে ফালাই দিমু। ফাইজলামো। হাড্ডি মাংস এক কইরা ফালামু। প্রত্যেকটাকে গুলি করবো।’

এ ঘটনায় গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর ৭৩(২খ)/৮৪ক ধারার অপরাধে আওয়ামী লীগ নেতা আলী ইস্কান্দারকে মামলার আসামি করেন সিংগাইর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম।

মামলার এজাহারে নির্বাচন কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম উল্লেখ করেন, আসামির এ ধরনের বক্তব্য ভিডিওর মাধ্যমে বিভিন্ন সামাজিকমাধ্যমে ছড়িয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সাধারণ ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক ও ভীতির সৃষ্টি হয়। এতে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অবৈধভাবে প্রভাব খাটানোর অভিপ্রায় প্রকাশ পায়।

মামলা বিষয়ে সিংগাইর থানার পরিদর্শক(তদন্ত)মানবেন্দ্র বালো বলেন, ‘আসামিকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।’

হরিরামপুরেও হুমকির ঘটনায় মামলা

একই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ দেওয়ান জাহিদ আহমেদ টুলুর ট্রাক প্রতীকের এক কর্মীকে নৌকা মার্কায় ভোট না দিলে হত্যাসহ নির্বাচনের পর দেশ থেকে বিতাড়িত করার হুমকির অভিযোগে হরিরামপুর থানায় পৃথক একটি মামলা হয়েছে।

এ ঘটনায় ভূক্তভোগী স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী শাখাওয়াত হোসেন বাদী হয়ে উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও নৌকার কর্মী ফরিদ মোল্লা এবং রিফাত চৌধুরীসহ অজ্ঞাত আরও ২০ থেকে ২৫ জনকে আসামি করে হরিরামপুর থানায় মামলা করেছেন।

এজাহার সূত্রে জানা গেছে, বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে হরিরামপুরের কৌড়ি এলাকায় একটি চায়ের দোকানে বসেছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী জাহিদ আহমেদের কর্মী শাখাওয়াত হোসেন। এ সময় তার হাতে নৌকা প্রতীকের লিফলেট দিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর নির্বাচনি প্রচারণায় যেতে বলেন যুবলীগের নেতা ফরিদ মোল্লা। এতে রাজি না হওয়ায় ফরিদ ও রিফাতসহ অজ্ঞাত ২০ থেকে ২৫ জন তাকে প্রাণনাশের হুমকি দেন। হুমকি দিয়ে বলা হয়, ‘৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর এই দেশে কীভাবে থাকস তা দেখে নেবো। সেই সাথে ঝিটকা বাজারে কীভাবে ট্রান্সপোর্ট ব্যবসা করস তাও দেখে নিবো। আর যদি একদিন শুনি ট্রাক মার্কার নির্বাচনে কারও কাছে ভোট চাইছস তাহলে তোকে জানে মেরে ফেলবো।’

এ ব্যাপারে যুবলীগের নেতা ফরিদ মোল্লা বলেন, ‘শাখাওয়াত বিএনপির কর্মী। বিএনপির ভোট বর্জনের লিফলেট বিতরণ করছিলেন। এ কারণে তার সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। যে অভিযোগে মামলা করেছেন তা মিথ্যা।’