বরইয়ের বাগান করে ভাগ্যবদল

বাগানের চারদিকে তাকালে শুধু বরই আর বরই। ছোট গাছগুলো বরইয়ের ভারে নুইয়ে পড়েছে। আপেলের মতো দেখতে বড় বড় বরই দুলছে গাছে গাছে। আকার, স্বাদে ভালো হওয়ায় বাজারে এর চাহিদাও বেশি। এই বাগান গড়ে তুলেছেন পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার মধ্য টিয়াখালী গ্রামের ফকরুদ্দিনের ছেলে মিজানুর রহমান। বরই চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন তিনি। 

জানা গেছে, কৃষি গবেষণার ফলে আমাদের দেশে বিভিন্ন ধরনের বরই বা কুলের উদ্ভাবন সম্ভব হয়েছে। দেশি টকজাতীয় বরইয়ের পাশাপাশি রয়েছে নারকেল বরই, আপেল কুল, বাউকুল ও থাইকুল। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ হচ্ছে। এ মুখরোচক ফলটি শীতকালে আমাদের দেশের প্রায় সব অঞ্চলে পাওয়া যায়। শখের বশে অনেকে বাড়ির ছাদেও চাষ করছেন। এটি খেতে সুস্বাদু, পুষ্টিগুণে ভরা। বরইয়ে রয়েছে ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও পটাসিয়ামসহ নানা উপাদান; যা মানবদেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

সরেজমিন দেখা গেছে, উদ্যোক্তা মিজানুর রহমানের বাগানের সব গাছে ধরেছে অসংখ্য বরই। কর্মচারীরা ঝুড়ি ভর্তি করে বিক্রির জন্য সেগুলো সংগ্রহ করছেন। মৌসুমে শুরু থেকেই তা পাইকারি ব্যবসায়ীরা বাগান থেকে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।

গাছে গাছে দুলছে বরইমিজান জানান, গত ৩ এপ্রিল ২০২৩ সালে চুয়াডাঙ্গা থেকে ৩৫০টি বরই চারা কেনেন এবং কৃষি অফিস থেকে ৭৫টি চারা সংগ্রহ করেন। ২৪ হাজার টাকার বরইয়ের চারা কিনে নিয়ে পৈতৃক ১০০ শতাংশ জমিতে চাষ শুরু করেন তিনি। সেই বরই বিক্রি করেই তার ভাগ্যের পরিবর্তন করেন। চলতি মৌসুমে বিক্রি করে এক লাখ বিশ হাজার টাকা লাভ হবে বলে আশা করছেন। বরই গাছ ৭-৯ ফুট লম্বা। সেখানে ‘বল সুন্দারী’ জাতের বরই আবাদ করেন। এক বছরে এসেছে অভাবনীয় সাফল্য।

এই বাগানে ৪২৫টির মতো গাছ রয়েছে। মাত্র সাত মাসের মধ্যেই প্রতিটি গাছে বিপুল পরিমাণে বরই ধরেছে। এখন ১০০ টাকা দরে বাজারে কুল বিক্রি করছেন। চার হাজার টাকা মণ দরে মোট পাঁচ মণ বিশ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। মিজান আশা করছেন, চলতি মৌসুমে আরও ৩৫-৪০ মণ বরই বিক্রি করবেন। একই সঙ্গে তার বাগান থেকে বারোমাসি থাই পেয়ারা ও আমও বিক্রি করবেন। বর্তমানে বাগানে ২০৫ শতাংশ জমি রয়েছে।

বরই চাষি মিজান বলেন, ‘বরই চাষ করে আমার অভিজ্ঞতা হয়েছে কীভাবে গাছ পরিচর্যা করতে হবে। কৃষি অফিস থেকেও আমাকে অনেক পরামর্শ দিয়েছে। এ জন্য আগামী বছর আরও ভালো ফলন হবে বলে আশা করি। সাত মাসের মাথায় গাছগুলো মাশআল্লাহ ভালো ফলন দিয়েছে। গাছ থেকে পাকা বরই সংগ্রহ করেই স্থানীয় বাজারে বিক্রি করি। অনেকেই বাগানে এসে বরই কিনে নিয়ে যান। এ বছর আবহাওয়া শেষের দিকে খারাপ থাকায় ফুল ঝরে পড়েছে এবং পাখির কারণে অনেক বরই নষ্ট হয়েছে।’

স্থানীয় বাসিন্দা বশির বলেন, ‘মিজানুর রহমানের বরই বাগানে ভালো উৎপাদন হয়েছে। আশা করি এ বছরই তিনি তার খরচ ওঠাতে পারবেন।’

বরই কিনতে আসা চাকরিজীবী কামরুজ্জামান কায়েস বলেন, ‘এ ধরনের বরইবাগান কলাপাড়ার আর কোথাও নজরে পড়েনি। বরইগুলোও খেতে দারুণ মিষ্টি। মিজান বরই বাগানে সফল হয়েছেন। তার মতো অন্যরাও ঝুঁকি নিলে উপকূলীয় এ অঞ্চল কৃষিক্ষেত্রে আরও এগিয়ে যাবে।’

কলাপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ আর এম সাইফুল্লাহ বলেন, ‘মিজানুর রহমান একজন সফল চাষি। তাকে কৃষি অফিস ও এসএসিপি সংস্থা সহযোগিতা করে যাচ্ছে। এ ছাড়া আমাদের মাঠ পর্যায়ে সহকারী কৃষি অফিসার কুল চাষে কৃষকদের সব রকম পরামর্শ দিয়ে আসছেন।’