বৃষ্টি, কুয়াশা আর অতিরিক্ত ঠান্ডার কারণে গোলাপে ছত্রাকের আক্রমণে যশোরের ফুলচাষিরা আতঙ্কিত হয়েছিলেন। কিন্তু সময় পার হতেই আস্তে আস্তে গোলাপ ফুটতে থাকে, চাষিদের মুখে হাসিও ফোটে। এরপর ফাগুনের হাওয়ায় গোলাপের ভালো দাম পেয়ে উচ্ছ্বসিত হয়েছিলেন তারা। কিন্তু ভারত থেকে হঠাৎ গোলাপ আমদানি করায় তাদের সেই উচ্ছ্বাসে ভাটা পড়েছে। এবার সর্বোচ্চ দামে গোলাপ বিক্রির পরদিনই তা পাঁচ-ছয় টাকায় নেমে এসেছে।
ফুল বাজার সূত্রে জানা যায়, এবার স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি দামে ফুল বিক্রি করেন ফুলের রাজধানীখ্যাত যশোরের ঝিকরগাছার গদখালী ইউনিয়নের চাষিরা। পয়লা ফাল্গুন, বসন্তের প্রথম দিন, একইদিন বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। এরপর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এই তিন দিবস উপলক্ষে ৬০-৭০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির আশা করছেন তারা। সেই সঙ্গে চলতি মৌসুমে অর্থাৎ ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১০০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির আশা তাদের।
কিন্তু একদিন পার হতেই চাষিদের মুখের সেই হাসি ম্লান হয়ে যায়। গোলাপ ১০ থেকে ১৫, জারবেরা ১৪ থেকে ১৬, রজনীগন্ধা ১১ থেকে ১২, গাঁদা প্রতি হাজার ৪০০ থেকে ৬০০ টাকায় নেমে আসে।
অনলাইনে ফুল বিক্রি করেন ঝিকরগাছা উপজেলার হাড়িয়া গ্রামের যুবক আল আমিন। তিনি জানান, আজ ফুলের দাম খুব কম। বাজারে আমদানিও কম। মঙ্গলবার তিনি বরিশাল, পটুয়াখালী আর নড়াইলে গোলাপ (১০-১৭ টাকা), রজনীগন্ধা (৮ টাকা), জারবেরা (১৬-১৭ টাকা) এবং গাঁদা ফুল পাঠিয়েছেন (৪০০ টাকা প্রতি হাজার)। প্রায় ৪০ হাজার টাকার ফুল পাঠিয়েছেন তিনি।
গোলাপের দাম কমার কারণ কী?
পানিসারা গ্রামের ফুলচাষি আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি গদখালী বাজারে ফুলের দাম খুবই কম। গোলাপ বিক্রি হয়েছে ৫ থেকে ৬ টাকায়, রজনীগন্ধা ৮ থেকে ১৩ টাকায়, জারবেরা ৮ থেকে ১২ টাকায়, গ্লাডিওলাস ১০ থেকে ১২ টাকায়, চন্দ্রমল্লিকা ১ থেকে ১.৫০ টাকায় এবং গাঁদা ফুলের হাজার বিক্রি হয়েছে ৩০০-৬০০ টাকায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘৯ থেকে ১০ ফেব্রুয়ারি ফুলের বাজার ভালো ছিল। ১১ ফেব্রুয়ারি চড়া দামে গোলাপ বিক্রি হয়েছে। কিন্তু গত দুই দিন ফুলের দাম হঠাৎ করেই নেমে আসে। কেননা এই অঞ্চলের দুই-একজন ব্যবসায়ী ভারত থেকে কয়েক লাখ গোলাপ আমদানি করেন। সেই ফুল সরাসরি বাইরের এলাকায় পাঠানো হয়। এজন্য গদখালীর অনেক কৃষকই বাইরে ফুল পাঠাতে পারেননি।’
জানতে চাইলে ফুল চাষি ও ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বসন্ত ও ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে আমরা দুদিন আগেই বিভিন্ন এলাকায় ফুল পাঠাই। আজ ফুলের বাইরের বাজার নেই। স্থানীয় বাজারে বিক্রি হবে। তা ছাড়া গত দুই দিন ভারতীয় গোলাপের কারণে আমাদের চাষিরা তাদের কাঙ্ক্ষিত দাম থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, কাল থেকে এসএসসি পরীক্ষা, সে কারণে খুচরা বাজারে ফুল বিক্রি কমেছে।’
রফিকুল ইসলাম ১৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকাসহ জেলার বাইরে গোলাপ (৬ টাকা), রজনীগন্ধা (১২-১৩ টাকা), গ্লাডিওলাস (১৫-১৬ টাকা), জারবেরা (১৫ টাকা) আর গাঁদা (৬০০ টাকা হাজার) পাঠান।
তিনি জানান, ফুলের পাইকারি বাজার খারাপ হলেও খুচরা বাজার বেশ ভালো। ফুল মোড়ে (পানিসারা মোড়) গোলাপ ১০ টাকার বেশি দামে বিক্রি হবে। যশোর শহরের ফুলের দোকানে গোলাপের দাম ১০ থেকে ১০০ টাকা পিস জানালে তিনি বলেন, ‘এগুলো করা ঠিক নয়। কেননা আমরা পাইকারি দাম ২০ টাকা করলে তারা ২৫ টাকায় বিক্রি করতে পারে, কিন্তু এমন অস্বাভাবিক দাম নিলে ভোক্তারা কিনতে যাবে না।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যশোরের প্রায় দেড় হাজার হেক্টর কৃষিজমিতে প্রায় ছয় হাজার কৃষক ফুল চাষের সঙ্গে জড়িত। দেশের মোট ফুলের চাহিদার ৭৪ শতাংশ এই জেলা থেকে সরবরাহ করা হয়। প্রতি বছর ডিসেম্বর মাস থেকে গদখালীর ফুলের চাহিদা ও বিক্রি বাড়তে থাকে। সেইসঙ্গে বাড়ে দামও।