যশোর-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি কাজী নাবিল আহমেদ বলেছেন, ‘১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে দেওয়া জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণই বাঙালির মুক্তির দলিল। তার সেই ভাষণ সারা পৃথিবীতে একটি স্থান করে নিয়েছে। একটি ভাষণের মধ্য দিয়ে একটি জাতির জন্ম হয়। জাতি স্বাধীনতা লাভ করে। সেই ভাষণে তিনি বলেন, “এবারের সংগ্রাম, মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম।” এর মাধ্যমেই দেশের স্বাধীনতা সেদিনই ঘোষণা করা হয়ে গেছে।’
মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) দুপুরে যশোর টাউন হল মাঠের স্বাধীনতা উন্মুক্ত মঞ্চে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে জেলা প্রশাসন আয়োজিত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা, ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক নেতৃত্ব এবং দেশের উন্নয়ন’ শীর্ষক আলোলোচনা সভা, পুরস্কার বিতরণ এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কাজী নাবিল আহমেদ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় সংসদ সদস্য কাজী নাবিল বলেন, ‘জাতির জনকের ছয় দফা ছিল বাঙালির মুক্তির সনদ। আমাদের হাজার বছরের ইতিহাসে এই প্রথম বাঙালিদের কথা, স্বাধিকারের কথা, বাংলার মানুষের অধিকার চর্চার কথা ছয় দফাতে সুস্পষ্ট ছিল। যে-কারণে বঙ্গবন্ধুকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া হয় এবং তাকে ফাঁসির কাষ্ঠে নেওয়ার সব চেষ্টা করা হয়। অনেক চড়াই-উতরাইয়ের পর ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে তাকে কারামুক্ত করে আনা হয়। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বাংলার মানুষ তার ছয় দফার পক্ষে ঐতিহাসিক রায় দেয়। কিন্তু তৎকালীন পাকিস্তান সরকার একের পর এক নানা প্রহসনমূলক পদক্ষেপ নেয়। সেই সময় পাকিস্তানের মাইনরিটি পার্টির কথা শুনলেও মেজরিটি পার্টির নেতা বঙ্গবন্ধুর কথা শোনেনি তারা। ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু সেই বিষয়টি সুস্পষ্ট করেন। মার্চ মাসে এসে তারা প্রহসনমূলক সমঝোতার চেষ্টা করলেও সেই সময় যুদ্ধের দামামা বেজে গেছে। ৪ মার্চ থেকে পুরো ঢাকা শহর ও পূর্ব পাকিস্তান বঙ্গবন্ধু এবং আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে এসে যায়।’
১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি ছিল মন্তব্য করে কাজী নাবিল বলেন, ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে সারা দেশে যে আন্দোলন-সংগ্রাম করে আপনারা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন, তা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি ঐতিহাসিক ও মীমাংসিত বিষয়। ৭৫ সালের পর একের পর এক সামরিক জান্তা, তৎকালীন খন্দকার মোশতাক আহমেদ, আবু সাদাত সায়েম, জিয়াউর রহমান, জাস্টিস আব্দুস সাত্তার, হোসাইন মুহাম্মদ এরশাদ এবং পরবর্তীতে খালেদা জিয়া- এই একুশটি বছর তারা দেশকে নব্য পাকিস্তান বানাতে চেয়েছিলেন। তারা বাংলাদেশ বেতারকে “রেডিও বাংলাদেশ”, জয় বাংলাকে “বাংলাদেশ জিন্দাবাদ”সহ যত ধরনের বিকৃতি করা যায় করেছিল। তারপরেও তাদের শেষরক্ষা হয়নি। বাংলার মানুষ জেনে ফেলেছে তাদের প্রকৃত ইতিহাস। তাই সেই কুচক্রীদের মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে।’
তিনি বলেন, ‘৭৫-এর কুচক্রী ও ৭১-এর পরাজিত শক্তি এখনও তাদের ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। যেমন তারা গত বছরের ২৮ অক্টোবর তথাকথিত আন্দোলনের নামে ষড়যন্ত্র করেছিল। তাদের সেই আন্দোলন ভেস্তে গেছে। এখন তারা দিগ্বিদিকশূন্য হয়ে বিভিন্ন অলিতে-গলিতে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এখন নতুন ইস্যু তৈরি করেছে, ভারতীয় পণ্য বর্জনের। এরপর আবার মেতে উঠবে অন্য কোনও ইস্যু নিয়ে। একর পর এক ভাঁওতাবাজির ইস্যু নিয়ে তারা মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। কিন্তু বাংলার মানুষ ঐক্যবদ্ধ রয়েছে। তারা উন্নয়নের পক্ষে রয়েছে। সে কারণে গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ফের বিপুল ভোটে শেখ হাসিনাকে নির্বাচিত করে পরপর চারবার এবং পঞ্চমবারের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছে।’
যশোরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদারের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন যশোরের পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার, বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী হোসেন মণি, বীর মুক্তিযোদ্ধা জাসদের কেন্দ্রীয় কার্যকরী সভাপতি অ্যাডভোকেট রবিউল আলম, যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা মুজহারুল ইসলাম মন্টু, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম মিলন, বীর মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা আফজাল হোসেন দোদুল, জেলা শিল্পকলার একাডেমির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহমুদ হাসান বুলু, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সাত্তার, বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী আব্দুস সবুর হেলাল প্রমুখ।
এর আগে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের সদস্যদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ২০২৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর থেকে ২০২৪ সালের ২৫ মার্চ পর্যন্ত যশোর সদর উপজেলা এলাকার আট জন বীর মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যুতে শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করা হয়।
আলোচনা সভার আগে সকালে সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ শহরের মণিহার চত্বরে বিজয় স্তম্ভে মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সেই সময় তার সঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, শ্রমিক লীগসহ বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।