যাত্রীর চাপ বাড়লেও ভোগান্তি নেই পাটুরিয়া-আরিচায়

ঈদযাত্রায় ভোগান্তি ছাড়াই পাটুরিয়া ও আরিচা ঘাট দিয়ে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ বাড়ি ফিরছে। ফেরিঘাটে দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাসগুলোকে অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে না। ঘাটে আসার কিছুক্ষণের মধ্যেই ফেরিতে ওঠার সুযোগ পাচ্ছে। তবে মহাসড়কের কয়েকটি অংশে ধীরগতিতে যানবাহনগুলোকে চলাচল করতে দেখা গেছে। সরেজমিনে মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এই চিত্র দেখা গেছে।

এদিকে, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের মানিকগঞ্জ অংশে কোথাও যানজটের খবর পাওয়া যায়নি।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার থেকে পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় যাত্রী ও যানবাহনের চাপ ছিল না। তবে পোশাক কারখানা ছুটি হওয়ার পর সোমবার দুপুর থেকে পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বেড়ে যায়। এসব যানবাহনের অধিকাংই লোকাল বাস। সেগুলো যাত্রীদের ঘাট এলাকায় নামিয়ে দিয়ে আবার ঢাকায় চলে যায়। ফেরি পারাপার হওয়া দূরপাল্লার বাসের চাপ কম থাকায় ঘাট এলাকায় ভোগান্তি নেই বললেই চলে। এবারের ঈদযাত্রায় পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে ১৭টি ফেরি এবং আরিচা-কাজিরহাট নৌপথে পাঁচটি ফেরিতে যাত্রী ও যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে।

এদিকে, বিআইডব্লিউটিএ সূত্র জানায়, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে ২২টি এবং আরিচা-কাজিরহাট নৌপথে ১০টি লঞ্চ দিয়ে যাত্রী পারাপার করা হচ্ছে। এ ছাড়া লঞ্চের পাশাপাশি আরিচা-কাজিরহাট নৌপথে ৪১ স্পিডবোটেও যাত্রীরা পারাপার হচ্ছেন।

পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় দেখা গেছে, পাটুরিয়া লঞ্চঘাটে যাত্রীদের প্রচণ্ড ভিড়। লোকাল বাসে পাটুরিয়া পুরাতন ট্রাকটার্মিনালে আসছেন এসব যাত্রীরা। এরপর প্রায় আধা কিলোমিটার হেঁটে তারা লঞ্চঘাটে যাচ্ছেন। সেখানে ১০ থেকে ১৫ মিনিট লঞ্চের জন্য অপেক্ষায় থাকার পর লঞ্চে উঠছেন। যাত্রীদের অনেকে ফেরিতেও উঠছেন। এরপর ওপারে দৌলতদিয়া প্রান্তে নামছেন। এ ছাড়া দূরপাল্লার বাসে করেও যাত্রীরা পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় আসছেন। তবে এসব দূরপাল্লার বাস ও যাত্রীর চাপ কম। ঘাটে আসার কিছুক্ষণের মধ্যে এসব বাস ফেরিতে উঠছে। ব্যক্তিগত গাড়ি এবং মোটরসাইকেলেও অনেকে গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছেন।

ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের মানিকগঞ্জ অংশে কোথাও যানজটের খবর পাওয়া যায়নিঢাকার অদূরে গাজীপুরের একটি পোশাক কারখানার শ্রমিক আবদুল্লাহ আল মামুন স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ায় ঈদ করতে যাচ্ছেন। সকাল ১১টার দিকে লঞ্চঘাট এলাকায় কথা হলে তিনি বলেন, ‘এবার ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে কোনও ভোগান্তি কিংবা যানজটে আটকে থাকতে হয়নি। তবে লঞ্চঘাটে এসে অল্প সময় লঞ্চের জন্য অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে।’

এখন পর্যন্ত ঘাটের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে জানিয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) শাহ মো. খালেদ নেওয়াজ বলেন, ‘পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ কমেছে। ভোগান্তি ছাড়াই এবার ঈদে ঘরমুখী যাত্রী ও যানবাহন এই নৌপথে পারাপার হচ্ছে। এদিকে, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কেও বাড়তি যানবাহনের চাপ থাকলেও কোথাও যানজটের খবর পাওয়া যায়নি। তবে মহাসড়কের মানিকগঞ্জ অংশের কয়েকটি স্থানে ধীরগতিতে যানবাহন চলাচল করছে।

মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড, বানিয়াজুরী, মহাদেবপুর বরঙ্গাইল ও টেপড়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় যানবাহনগুলো ধীরগতিতে চলাচল করছে। এসব স্থানে পুলিশ সদস্যরা যানবাহনগুলোকে সুশৃঙ্খলভাবে চলাচলে সহায়তা করছেন।

সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় কথা হয় নীলাচল পরিবহনের বাসের চালক মোবারক হোসেন সঙ্গে। তিনি জানালেন, এবার সড়কের কোথাও যানজটে আটকে থাকতে হয়নি। তবে অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে বাসস্ট্যান্ড ও বিভিন্ন স্টপেজে ধীরগতিতে চলাচল করতে হচ্ছে।

মানিকগঞ্জ জেলা ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (প্রশাসন) কেএম মেরাজ উদ্দিন বলেন, ‘ঈদযাত্রায় যাত্রী ও যানবাহনের বাড়তি চাপ বাড়লেও ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে মানিকগঞ্জ অংশে কোথাও যানজট নেই। কয়েকটি স্থানে ধীরগতিতে চলাচল করছে। সড়কে ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি বিভিন্ন ইউনিটের সদস্যরা একযোগে কাজ করছেন।’

এবারের ঈদযাত্রায় কোথাও যানজট হবে না বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।