‘ওরা আমার মিরাজকে বাঁচতে দেয়নি’

‘আমার মিরাজ ফোন দিয়ে বলছিল, “বাবা ঈদের বাজারের বিষয়ে তুমি কোনও চিন্তা করো না। আমি মালিকের সঙ্গে হিসাবে করে টাকা পাঠিয়ে দেবো। তারপর বাড়িতে আসবো ঈদ করতে।” ওরা আমার মিরাজকে বাঁচতে দেয়নি।’ এই বলে আহাজারি করতে থাকেন নিহত কাভার্ডভ্যান চালক মিরাজের বৃদ্ধ বাবা আবদুল হক।

তিনি মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) কুমিল্লা নগরীতে সাংবাদিকদের কাছে এই আকুতি জানান। মিরাজ লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি থানার পূর্ব চর সীতা গ্রামের আবদুল হক মিয়ার ছেলে।

নিহতের পরিবার ও স্থানীয় সূত্র জানায়, গত ২১ মার্চ প্রতিদিনের মতো কাভার্ডভ্যান চালক মিরাজ তার গাড়িতে (রেজি. নং চট্ট-ট ১১-৭৬১৯) মালামাল নিয়ে ঢাকা থেকে নোয়াখালীর উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন। কুমিল্লার পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের সামনে সেন্টমার্টিন পরিবহনের (রেজি. নং: ঢাকা মেট্রো-ব-১২-২৯৬৮) একটি বাস বেপরোয়া গতিতে এসে কাভার্ডভ্যানের পেছনে ধাক্কা দেয়। এতে ড্রাইভিং সিটে থাকা মিরাজ ছিটকে পড়ে নিজ গাড়ির চাকার নিচে পড়ে ঘটনাস্থলে মারা যান।

নিহতের বৃদ্ধ বাবা বলেন, ‘মৃত্যুর আগের দিন সন্ধ্যায় আমার ছেলে কল দিয়ে বলে, “বাবা, মাকে বলবা আমার জন্য দোয়া করতে। তুমি ঠিকমতো ওষুধ খেও।” সকালে শুনতে পাই, আমার সোনার মানিক গাড়ির নিচে পড়ে মারা গেছে। বাবার কাঁধে ছেলের লাশ কতটা কষ্টের সেটি শুধু একজন বাবাই জানেন। আমার মিরাজ মারা যায়নি, ওরা আমার ছেলেকে হত্যা করেছে। তারা যদি বেপরোয়া বাসটি না চালাতো, তাহলে আমার ছেলে আজ আমার বুকে থাকতো। আমার সন্তান হত্যার বিচার চাই। আমার মতো আর কোনও বাবা-মায়ের কোল যেন খালি না হয়।’ এসব বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন নিহত মিরাজের বৃদ্ধ বাবা আবদুল হক মিয়া।

এ বিষয়ে নিহতের বড় ভাই দিদার বাদী হয়ে ঘটনার পরেই সদর দক্ষিণ মডেল থানায় সেন্টমার্টিন পরিবহনের বাসটিসহ অজ্ঞাত চালকের বিরুদ্ধে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানায় মামলা করেন। মামলাটি আদালতে চলমান রয়েছে।

কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আলমগীর ভূঁইয়া বলেন, ‘মামলাটি আমাদের থানায় দায়ের করা হলেও তদন্ত করছে হাইওয়ে পুলিশ। এ বিষয়ে হাইওয়ে থানায় যোগাযোগ করলে বিস্তারিত জানা যাবে।’

এদিকে, ময়নামতি হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইকবাল বাহার মজুমদারের মোবাইলে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।