কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করায় জেলার উজানে নাগেশ্বরী ও সদর উপজেলার বেশ কিছু চরাঞ্চলের বাড়িঘর থেকে পানি নামছে। দুধকুমার ও ধরলা নদীর পানি দ্রুত হ্রাস পেয়ে বিপদসীমার নিচে নামলেও ব্রহ্মপুত্রের তিন পয়েন্টে এখনও বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে এই নদের নিম্নাঞ্চলের বাড়িঘরে এখনও হাঁটু থেকে কোমর সমান উচ্চতায় পানি রয়েছে। এ অবস্থায় সরকারিভাবে ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে স্থানীয় প্রশাসন।
বন্যাকবলিত এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ধরলা ও দুধকুমারের পানি কমতে থাকায় নাগেশ্বরী উপজেলার রায়গঞ্জ ও বামনডাঙা ইউনিয়ন, সদর উপজেলার ঘোগাদহ ও হলোখানা ইউনিয়নসহ নদ-নদীর উজানের চরাঞ্চলের বসতভিটা থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। এতে হাফ ছাড়ছেন দুই সপ্তাহ ধরে পানিবন্দি বাসিন্দারা। তবে বাড়িঘরে এবং সড়কে জমে থাকা কাদাপানিতে ভোগান্তি অসমাপ্তই থেকে গেছে।
শুক্রবার পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র নদ নাগেশ্বরীর নুনখাওয়া, উলিপুরের হাতিয়া ও চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। তবে এ নদের পানিও কমতে শুরু করেছে। এর নিম্নাঞ্চলে সদরের যাত্রাপুর, উলিপুরের সাহেবের আলগা, বেগমগঞ্জ ও হাতিয়া ইউনিয়নসহ চিলমারী উপজেলার নিম্নাঞ্চলের বাড়িঘরে এখনও পানি রয়েছে। দুই সপ্তাহ ধরে পানিবন্দি থাকা হাজারো পরিবারের লক্ষাধিক মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করছেন। খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট চলমান রয়েছে। প্লাবিত এলাকায় দেখা দিয়েছে গোখাদ্যের সংকট।
বন্যাকবলিত এলাকায় মানুষের সঙ্গে খাদ্যকষ্টে রয়েছে গবাদিপশু। প্লাবিত এলাকায় তৃণভূমি ও খড়ের ঢিবি তলিয়ে যাওয়ায় গোখাদ্যের সংস্থান নিয়ে বিপাকে পড়েছে পরিবারগুলো। কলাপাতা কিংবা ছন দিয়ে গবাদিপশুর ক্ষুধা নিবারণের চেষ্টা করছেন তারা।
চরাঞ্চলের অনেক পানিবন্দি পরিবার শুক্রবার পর্যন্ত খাদ্য সহায়তা পায়নি। প্লাবিত এলাকায় রোজগারের পথ বন্ধ হওয়ায় দিনমজুর পরিবারগুলো খাদ্যকষ্টসহ নানা সংকটে রয়েছে। কোনও এলাকায় পর্যাপ্ত সরকারি সহায়তা না পৌঁছানোর খবরে তাৎক্ষণিক সহায়তা বরাদ্দের ব্যবস্থা নিচ্ছে জেলা প্রশাসন।
সদরের ঘোগাদহ ইউনিয়নের চর কুমরের বস এবং নামাচরসহ দুধকুমারের নিম্নাঞ্চলের বাড়িঘর থেকে পানি নামতে শুরু করছে বলে জানিয়েছেন ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক। শুক্রবার বানভাসিদের জন্য নতুন করে তিন মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ পাওয়া গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ কম হওয়ায় পানিবন্দি অনেক পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া সম্ভব হয়নি। নতুন করে আরও ৩শ’ পরিবারকে সহায়তা দেওয়ার জন্য বরাদ্দ পাওয়া গেছে। শনিবার তা বিতরণ করা হবে।’
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, ‘সরকারিভাবে ত্রাণ তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। সেই সঙ্গে বিশুদ্ধ পানি, চিকিৎসা ও স্যানিটেশনের দিকে আমরা নজর দিয়েছি। মানুষের কষ্ট লাঘব করতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’ চিলমারী ও রাজিবপুর উপজেলায় গোখাদ্য বিতরণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলেও জানান জেলা প্রশাসক।
জেলা প্রশাসনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখার প্রতিবেদন বলছে, চলমান বন্যায় জেলায় ৩৭ হাজার ৮৫ পরিবার পানিবন্দি হয়েছে। শুক্রবার পর্যন্ত জেলার ৯ উপজেলায় ৫৮৭ মেট্রিক টন চাল এবং ২৪ হাজার ৩৬০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।