পাবনায় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ সমাবেশে গুলি, ৩ জন নিহত

পাবনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে গুলিতে তিন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ আরও কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এ ঘটনায় ৩২ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। এ সময় দফায় দফায় বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষ এবং ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

রবিবার (৪ আগস্ট) দুপুরে শিক্ষার্থীরা পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ‍উপস্থিতিতে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শহরের আব্দুল হামিদ সড়কের জেবি মোড়ে অবস্থান নেন এবং নানা স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ সমাবেশে পেছন থেকে অতর্কিত গুলি করা হয়। এতে জাহিদুল ইসলাম (১৯), মাহবুবুল হোসেন (১৬), ফাহিম (১৭) নামে তিন শিক্ষার্থী নিহত হন।

নিহতরা হলেন– হাজীরহাট এলাকার আবুল কালামের ছেলে আরাফাত হোসেন মাহবুবুল (১৬), বলরামপুর গ্রামের জাহিদুল ইসলাম (১৯) এবং এডওয়ার্ড কলেজের শিক্ষার্থী ফাহিম হোসেন (১৭)। আহতরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাদের পরিচয় এখনও পাওয়া যায়নি।

পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. রফিকুল হাসান হতাহতের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে, পরিস্থিতি সামাল দিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়লে সাময়িক সময়ের জন্য বিক্ষোভকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। এ সময় মৃত্যুর খবর শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছালে তারা বৃষ্টি উপেক্ষা করে বিক্ষোভ করেন এবং স্লোগান দিতে থাকেন।

এ ঘটনার পর থেকে শিক্ষার্থীরা শহরের আব্দুল হামিদ সড়কে অবস্থান করছেন। পরিস্থিতি থমথমে রয়েছে।

পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আলম বলেন, ‘আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে তাদের ঘোষিত কর্মসূচি পালন করছিলেন। এ সময় পেছন থেকে পাবনা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ ও জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শিবলী সাদিক পৃথক হামলা চালান। এরই মধ্যে শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে আওয়ামী লীগ নেতা আবু সাঈদ এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে। পুলিশ ধাওয়া দিলে তারা পিছু হটে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।’

বিক্ষোভকারী একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের ৩৫ জন ভাই আহত হয়েছেন। তাদের আমরা দ্রুত পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেছি। এ সময় হাসপাতালে তিন জন মারা গেছেন।’

পুলিশ ও  প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শিবলী সাদিক এবং তার লোকজন শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালালে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা তাদের ধাওয়া করেন। এ সময় তারা পিছু হটলে শিক্ষার্থীরা যুবলীগের ওই নেতার অফিস ভাঙচুর করেন। এ ছাড়াও তারা শহরের বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুর করেন। এ ঘটনার পর দ্বিতীয় দফায় আওয়ামী লীগ নেতা সাঈদ চেয়ারম্যান এবং তার লোকজন সশস্ত্র অবস্থায় হামলা চালালে পুলিশ ও শিক্ষার্থীরা ধাওয়া দিলে তারা পিছু হটে। পরে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা সাঈদ চেয়ারম্যানের গাড়িতে আগুন দেন। এ আগুন একটি ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি টিম ঘটনাস্থলে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।