বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (ফরিদপুর বিভাগীয়) শামা ওবায়েদ ইসলাম রিংকুসহ ৩৬ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ফরিদপুরে হত্যা মামলা করা হয়েছে। শুক্রবার (২৩ আগস্ট) দিবাগত রাতে জেলার নগরকান্দা থানায় মামলাটি করা হয় বলে নিশ্চিত করেছেন নগরকান্দা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান শাকিল।
শামা ওবায়েদ এবং কৃষক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক (পদ স্থগিত) শহীদুল ইসলামের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে বিএনপির এক কর্মী নিহত হন। এ ঘটনায় শামা ওবায়েদকে প্রধান আসামি করে এ হত্যা মামলা দায়ের করে নিহতের পরিবার।
নগরকান্দা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার বলেন, ‘শুক্রবার দিবাগত রাত ১টার দিকে নগরকান্দা থানায় নিহত কবির ভূঁইয়ার স্ত্রী মোনজিলা বেগম (৪৪) বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। মামলায় ৩৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞাত হিসেবে আরও ৫০ থেকে ৬০ জনকে আসামি করা হয়েছে। শামা ওবায়েদকে এ মামলায় হুকুমের আসামি করে তার নাম এক নম্বরে রাখা হয়।
‘মামলায় অভিযুক্ত ৩৬ জনের মধ্যে নগরকান্দা উপজেলা বিএনপির জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি বাবুল তালুকদার, সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমান মুকুল ও তার ভাই মাসুদুর রহমানও রয়েছেন।’
নগরকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুর রহমান বলেন, এ মামলায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। তবে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।’
এ বিষয়ে শামা ওবায়েদ বলেন, ‘এটি আমার বিরুদ্ধে করা ষড়যন্ত্রের একটি অংশ। মামলাটি আমার বিরুদ্ধে করানো হয়েছে। তবে স্থানীয় প্রশাসন ও বিএনপির কাছে আমি ন্যায়বিচার ও নিরপেক্ষ তদন্ত প্রত্যাশা করছি।’
এ প্রসঙ্গে ফরিদপুর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সৈয়দ জুলফিকার হোসেন জুয়েল বলেন, ‘শামার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে ক্ষতি করার জন্য তার নাম জড়ানো হয়েছে। সঠিক তদন্ত করলেই প্রমাণ হবে তিনি এতে জড়িত নন। ঘটনার দিন তিনি বাড়িতেই ছিলেন না।’
তিনি আরও বলেন, ‘যার উসকানিতে শামার নামে মামলাটি করা হয়েছেন তিনি বিএনপির ভাবমূর্তি নষ্ট করার কাজ করেছেন।’
প্রসঙ্গত, বুধবার (২১ আগস্ট) কৃষকদল নেতা শহীদুল ইসলাম মোটর শোভাযাত্রা করে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা চৌরাস্তা হয়ে নগরকান্দা উপজেলা সদরে পথসভা করতে যান। তখন শামা ওবায়েদের সমর্থকদের সঙ্গে তার সমর্থকদের সংঘর্ষ হয়। এতে স্থানীয় ছাগলদী মহল্লার বাসিন্দা কবির ভূঁইয়া (৫০) নামে ওই ব্যক্তি নিহত হন।
পরে ওইদিন সন্ধ্যায় ফরিদপুর প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করে শহীদুল ইসলাম অভিযোগ করেন, ‘এই হত্যার নির্দেশদাতা শামা ওবায়েদ ইসলাম। স্পষ্টভাবে আমি এ কথা বলছি। তিনিই হত্যার মদতদাতা, নির্দেশদাতা।’
পরদিন শুক্রবার (২২ আগষ্ট) শামার পক্ষে ফরিদপুর প্রেসক্লাবে একটি সংবাদ সম্মেলনে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক জুলফিকার হোসেন জুয়েল বলেন, ‘শহিদুল ইসলাম বাবুল নব্য বিএনপি ও অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ে শোডাউন এবং পথসভা করার চেষ্টা করেন। এসব জানতে পেরে নগরকান্দা উপজেলা বিএনপি তাদের প্রতিহত করে।’
নিহত কবির ভূঁইয়াকে অনুপ্রবেশকারী হিসেবে আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, ‘কবির ভূঁইয়া বিএনপি বা কৃষকদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। তিনি জাকের পার্টির সমর্থক ছিলেন।’
এ ঘটনার জেরে বুধবার রাতেই বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত আলাদা দুটি পত্রে বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদসহ শহীদুল ও শামা ওবায়েদের সব পদ স্থগিত করেন।