এলাকাবাসীর পাঁচ দিনের চেষ্টায় মেরামত হলো ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধ

অবশেষে খুলনার পাইকগাছার দেলুটির কালীনগরে ভেঙে যাওয়া পাউবোর বেড়িবাঁধ পাঁচ দিন পর মেরামত করা সম্ভব হয়েছে। সোমবার রাতে স্থানীয় মানুষদের টানা পরিশ্রমে বাঁধটি আটকানো সম্ভব হয়েছে। দেলুটি ইউপি চেয়ারম্যান রিপন কুমার মণ্ডল জানান, ভাটার সময়ে পর্যাপ্ত মাটি ফেলে বেড়িবাঁধ মেরামত করে এলাকাকে নিরাপদ করা হয়েছে।

প্যানেল চেয়ারম্যান সুকুমার কবিরাজ বলেন, ‘দেলুটি, লতা, লস্কর, দাকোপ, সোলাদানার হাজার হাজার নারী-পুরুষ পাঁচ দিন ধরে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে বাঁধের কাজ সম্পন্ন করেছেন।’

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহেরা নাজনীন জানান, দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য প্রশাসন সাধ্যমতো সহায়তা করছে এবং পর্যায়ক্রমে এসব ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ইমরুল কায়েস জানান, দুর্যোগকবলিত দেলুটিতে ১২ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ এবং প্রতিদিন খিচুড়ি ও শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।

প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) সুকৃতি মোহন সরকার বলেন, ‘দেলুটির ২২নং পোল্ডারের ১৩ গ্রামের ১৫ হাজার আশ্রয়হীন মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। বিভিন্ন স্থান থেকে এ সব প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা স্থলপথ ও নৌপথে দুর্গত এলাকায় পৌঁছে ব্যাপক পরিমাণ শুকনো খাবার ও রান্না করা খাবার, কাঁচা তরকারি, সুপেয় পানি, স্যালাইন, পলিথিন, কাপড়-চোপড়সহ নানা উপকরণ বিতরণ করছেন।’

ক্ষতিগ্রস্ত নাসির উদ্দিন, কবরী মণ্ডল (স্বাস্থ্যকর্মী), সুব্রত মণ্ডল আক্ষেপ করে জানান, যারা ত্রাণ পাচ্ছে, তারা শুধু পেয়েই যাচ্ছে। এসব ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ সুষম বণ্টন দাবি করেন। ত্রাণ সরবরাহকারীদের তারা জানান, জলমগ্ন ভেতরের এলাকার অনেক গ্রাম বিশেষ করে কালিনগর, দারুণমল্লিক, সেনেরবেড়, হাটবাড়ীতে বহু পানিবন্ধি পরিবার আটকে পড়েছে। নৌপথে তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ত্রাণ দিলে কেউ বঞ্চিত হবে না।

ভাঙনকুল এলাকার বাসিন্দা পলাশ কন্তি রায় জানান, ঘূর্ণিঝড় রেমালে প্লাবিত হয়ে ২২নং পোল্ডারের মানুষ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এখন আমন মৌসুমে দ্বিতীয় দফায় আবারও নদীভাঙনে সবকিছু তছনছ হয়ে গেলো।

এদিকে, বিভিন্ন সংগঠন, প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার পাশাপাশি নৌ বাহিনীর একটি টিম কলিনগর কলেজ আশ্রয়কেন্দ্র, দারুণমল্লিক ও হরিণখোলায় রাস্তার ওপর আশ্রয়হীন মানুষের মাঝে তাঁবু, নানা খাদ্যসামগ্রী ও কাপড়-চোপড় বিতরণ করেছেন।

অন্যদিকে, স্বাস্থ্যসেবায় পাইকগাছার ‘হৃদয় বাংলাদেশ’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান দুর্গত এলাকায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের স্বাস্থ্য ক্যাম্প বসিয়ে পানিবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণে ওষুধ বিতরণ করে।

উল্লেখ্য, গত ২২ আগস্ট পাইকগাছার কালিনগর রেখামারি বেড়িবাঁধ ভেঙে ১৩টি গ্রাম প্লাবিত হয়। এর ফলে এ গ্রামগুলোর মানুষ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। চিংড়ি ঘের, রোপা আমন ধান ও বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্লাবিত গ্রামগুলো হলো– কালীনগর, দারুণমল্লিক, গোপী পাগলা, তেলিখালী, সৈয়দখালী, খেজুরতলা, সেনের বেড়, হাটবাড়ি, ফুলবাড়ী, বাগীরদানা, দুর্গাপুর, হরিণখোলা ও নোয়াই।